মাদক মামলায় বন্দিদের জন্য আলাদা কারাগার হচ্ছে
মাদক মামলার আসামিদের জন্য দেশের প্রতিটি বিভাগে আলাদা কারাগার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
মাদক মামলার আসামিদের জন্য দেশের প্রতিটি বিভাগে আলাদা কারাগার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব কারাগারে শুধু মাদক মামলার আসামিদেরই রাখা হবে। সেখানে মাদকাসক্তদের মাদকমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ফেনীতে একটি আলাদা কারাগার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে—সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন কারাগার থেকে মাদক মামলার আসামিদের নিয়ে আসা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আলাদা কারাগারবিষয়ক একটি নীতিমালাও করা হচ্ছে। এই নীতিমালা জারির পর সাত বিভাগে আলাদা কারাগার স্থাপনের কাজ বেগবান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। গত ২৪ জুন সাতটি বিভাগীয় শহরে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘মাদকাসক্তদের জন্য সরকারের বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত এবং সফল রাষ্ট্রের কাতারে উপনীত হতে হলে আমাদের এই তরুণসমাজকে মাদক থেকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেয়িয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারাগারে মাদক মামলার আসামিদের আলাদা রাখার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ রয়েছে।
আমরা প্রাথমিকভাবে ফেনী কারাগারে সেটি চালু করেছি। সেখানে মাদকাসক্তদের মাদকমুক্ত করার জন্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে দেশের অন্য কারাগারগুলোতেও তা চালু করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাদক অধিশাখা) এ এফ এম এহতেশামুল হক বলেন, ‘মাদক নির্মূলে মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারা বন্দিদের মধ্য থেকে মাদকাসক্ত বন্দিদের আলাদা রাখার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে, কারা সূত্র জানিয়েছে দেশের ৬৮টি কারাগারে ৭৮ হাজার বন্দি রয়েছে। তার মধ্যে ২০ হাজার বন্দিই মাদক মামলার আসামি। এসব বন্দি কারাগারের বাইরে ও ভেতরেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। অনেককে বাগে আনতে বেগ পেতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকেও। একাধিক কারা কর্মকর্তা জানান, মাদক মামলার আসামিদের মধ্যে যেমন মাদক বিক্রেতা রয়েছে, তেমনি মাদকাসক্তও রয়েছে। মাদকাসক্তরা মাদক গ্রহণ করে নানা অপরাধে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসে। কারাগারে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে বন্দিদের সঙ্গেই রাখা হয়। কোনো কোনো মাদকাসক্ত কারাগারে ঢুকেই চিৎকার শুরু করে। অনেকে অন্য বন্দিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। কেউ কেউ মাদক না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। ফলে এদের কারাগারে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। এই বাস্তবতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তাদের সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে না রেখে আলাদা কারাগারে রাখার। শুধু তাই নয়, মাদক মামলার আসামিদের মধ্যে যারা মাদকাসক্ত তাদের মাদকমুক্ত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আলাদা কারাগারে মাদক নিরাময়কেন্দ্রও তৈরি করা হবে। এ জন্য কী ধরনের চিকিৎসকদের সহায়তা লাগাবে, খরচ কেমন হবে—এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত সাপেক্ষে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে। সেটি বাস্তবায়ন করবে কারা কর্তৃপক্ষ। আলোচনার ভিত্তিতেই কারা কর্তৃপক্ষ ফেনী-২ কারাগারে পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরুও করেছে।

কারাগারের সুপার মো. দিদারুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেনীতে নতুন কারাগার নির্মাণের পর পুরনো কারাগারের বন্দিদের সেখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরনো কারাগারটি ফেনী-২ কারাগার নামে গত ১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করেছে। এই কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ১৭২ জনের। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন কারাগার থেকে মাদক মামলার আসামিদের এখানে আনা হচ্ছে।’ জানা গেছে, ফেনীর পর কিশোরগঞ্জ-২ কারাগারেও মাদক মামলার বন্দিদের রাখার প্রস্তুতি চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে নতুন সিনথেটিক ও সেমিসিনথেটিক মাদক আসছে। ফলে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার হার আরো বেড়েছে। নতুন ধরনের মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে জড়াচ্ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাচ্ছে। জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও জড়াচ্ছে অপরাধে।
চাঁপাই প্রেস/সূত্র_কালের কন্ঠ



