বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক-তার সঙ্গে কাজ করবে ভারত-বিক্রম মিশ্রি

ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকে কেন্দ্রে রেখে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায়। আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এমন আশা করছে ভারত। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে যারাই বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে, তার সঙ্গে কাজ করবে ভারত

বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক-তার সঙ্গে কাজ করবে ভারত-বিক্রম মিশ্রি
সংগ্রহীত ছবি

ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকে কেন্দ্রে রেখে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায়। আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এমন আশা করছে ভারত। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে যারাই বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে, তার সঙ্গে কাজ করবে ভারত।

আজ সোমবার সাউথ ব্লক হিসেবে পরিচিত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব-এর দিল্লি সফররত একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সময়সীমা দিয়েছে, তার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, কোনও দেরি না করে এ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল অভ্যন্তরীণ বৈধতার জন্য দরকার এমন নয়, বহির্বিশ্বে বৈধতার জন্যও এটা দরকার।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মিশ্রি বলেন, সাধারণ অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে বৈশিষ্ট্য থাকে যা নির্বাচনের প্রক্রিয়াগুলিকে বৈধতা দেয়, তার কথা তিনি বলেছেন। দিনের শেষে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণের।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা 'ত্যাগ করে' ভারতে আশ্রয় নেন। তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ করেছে। এ বিষয়ে ভারতের কী অবস্থান জানতে চাইলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, এর সঙ্গে বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া জড়িত আছে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনাক্রমে এ বিষয়টি দেখা হবে। 

গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তি নিয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ এখনো আছে। তিস্তার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে। যৌথ নদী কমিশন নিয়মিত বসছে। এগুলো তারা দেখবে।

সীমান্ত হত্যা, পুশ-ইন প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ৪০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্তে সমস্যা থাকবেই। সমস্যাগুলো অস্বীকার না করে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সমাধান না মিললে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।

সীমান্তের ভারতীয় অংশেও বহু ঘটনা ঘটে, এটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার ও চোরাকারবার হয়। অস্ত্রপাচারও হয়। এগুলো বন্ধ হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে।

সীমান্ত পথে লোক ফেরত পাঠানোর দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া না মেনে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া (পুশ-ইন) প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়মিত প্রক্রিয়ায় কাজ হচ্ছে না। দুই হাজার চারশত ব্যক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। নিয়মিত প্রক্রিয়া কার্যকর করা দরকার। 

চার হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সীমান্ত অধিকাংশ স্থানে ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি আশা প্রকাশ করেন, অবশিষ্ট ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্পন্ন হলে সীমান্ত অপরাধ কমবে। 

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কম ভিসা দেওয়ার বিষয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এমনটা হয়ে থাকতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। 

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর যেসব ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেগুলো ভবিষ্যতে দুই দেশের নাগরিকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে, এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান কি, এমন প্রশ্নে বিক্রম মিশ্রি তৃতীয় দেশের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের শান্তি, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে ভারতের স্বার্থ রয়েছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ভারতেরও একটি ভূমিকা আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদ বাড়ছে। এ বিষয়গুলো কেবল ভারতের নিজের জন্য নয়, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে ভারতের সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কোনো কারণ নেই, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর চেষ্টা করা উচিত। বিশ্ব খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই অঞ্চলে এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভবিষ্যৎমুখী এজেন্ডার জন্য নজর দেওয়া উচিত

চাঁপাই প্রেস/সূত্র_দৈনিক দেশ রূপান্তর