নাচোলে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা নির্মাণ হচ্ছে

বিপ্লবী ইলা মিত্র এবং তেভাগা আন্দোলনের তথ্য উপাত্ত তথা সে সময়কার ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংরক্ষণে গড়ে তোলা হচ্ছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা

নাচোলে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা নির্মাণ হচ্ছে

বরেন্দ্রভূমির ঐতিহাসিক জনপদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা। এখানেই ১৯৪৮-৪৯ সালে বিপ্লবী ইলা মিত্রের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল তেভাগা আন্দোলন। তেভাগা আন্দোলনের সেই মহীয়সী নারী ইলা মিত্রের স্মরণে ২০১২ সালে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের কেন্দুয়া পঞ্চানন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতি সৌধ। এছাড়া নাচোল উপজেলার প্রবেশদ্বার আমনুরায় নির্মাণ করা হয়েছিল ইলা মিত্র গেট। রয়েছে ইলা মিত্রের নামে দুটি পাঠাগার। এসব স্থাপনা ছাড়া ইলা মিত্র তথা তেভাগা আন্দোলনকে জানবার বা বুঝবার জন্য আর কোনো উপাদান ছিল না নাচোলে।

এবার এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে নাচোল উপজেলা প্রশাসন। বিপ্লবী ইলা মিত্র এবং তেভাগা আন্দোলনের তথ্য-উপাত্ত তথা সে সময়কার ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংরক্ষণে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘ইলা মিত্র সংগ্রহশালা’। তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত নাচোল উপজেলার রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশেই ২৬ শতক জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই সংগ্রহশালাটি। এর ভবন নির্মাণেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরি হচ্ছে শিল্পমণ্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল এ ভবনটি। দুই তলা মিলিয়ে প্রায় ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের ব্যালকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। এখনো এর নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির একটু অদূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, বিশ্রামের জন্য।

উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, নির্মাণকাজ শেষ হলেই ইলা মিত্র সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হবে।

জানা গেছে, সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও এলাকার ঐতিহ্যবাহী উপাদানও স্থান পাবে। স্থানীয় যেসব ঐতিহ্য হারাতে বসেছে, যেমনÑ ঢেঁকি, লাঙল, জাঁতাসহ আরো যেসব ঐতিহ্য রয়েছে, সেসব স্থান পাবে সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র বানানোর চিন্তাও রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের। এরই মধ্যে সংগ্রহশালা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে খাঁড়ির ধারের গাছ-গাছালিতে উন্নয়ন সংস্থা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির সহযোগিতায় পাখিদের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন জানান, ইলা মিত্রের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি নামমাত্র ছিল। ওখানে কোনো পরিবেশ ছিল না। গতবছর (২০২২) ইলা মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে এসব বিষয় অবগত হই এবং তখন থেকেই ভাবনা শুরু হয়, সেখানে কিছু করার। তিনি আরো জানান, সে ভাবনা থেকেই জেলা প্রশাসক স্যারের সম্মতিক্রমে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, সেখানে গিয়ে তরুণ প্রজন্ম এবং পর্যটকরা যেন ইলা মিত্র তথা তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে।

মোহাইমেনা শারমীন বলেন, সংগ্রহশালাটিতে যে কোনো সময় যাওয়ার জন্য এরই মধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার হেরিং বন বন্ড রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি রাস্তাগুলোর কাজ করা হবে। বর্তমানে কিছু কাজ চলমান রয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণে পর্যায়ক্রমে আরো অনেক ধরনের কাজ করা হবে।