সারাদিন শরীরকে সক্রিয় রাখার কার্যকর উপায়

অনেকের জীবনধারা এমন যে দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় বসে কাজ করে। বিশেষ করে অফিসকর্মী বা ঘরে বসে কাজ করা মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক নড়াচড়া খুব সীমিত থাকে।

সারাদিন শরীরকে সক্রিয় রাখার কার্যকর উপায়
সংগ্রহীত ছবি

অনেকের জীবনধারা এমন যে দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় বসে কাজ করে। বিশেষ করে অফিসকর্মী বা ঘরে বসে কাজ করা মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক নড়াচড়া খুব সীমিত থাকে।

অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘসময় বসে থাকা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এমনকি অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

ছোট ছোট মুহূর্তকে কাজে লাগান_অনেকে মনে করেন, কেবল আধা ঘণ্টার ব্যায়াম বা যোগব্যায়ামই শরীরের জন্য কার্যকর। তবে শারীরিক থেরাপিস্ট বিশেষজ্ঞ লরি ডিয়ামস বলছেন, “সব ধরনের নড়াচড়াই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি এক-দুই মিনিটের হালকা নড়াচড়াও শরীর ও মন ভালো রাখে।

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ‘পার্সোনাল ট্রেইনার অব দ্য ইয়ার’ তারাহ ডি লিয়ন বলেন, “দিনে কয়েক মিনিট সময় বের করে নিতে পারলেই যথেষ্ট। যেমন- খাবারের পর পাঁচ মিনিট হাঁটা, বিরতির সময় সামান্য বুকডন বা উঠবস (স্কোয়াট)।এসবকে তিনি বলেন ‘অনুশীলনের ক্ষুদ্র অংশ’।

বসে থেকেও শরীর সচল_সবসময় উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। তবে চেয়ারে বসে থেকেও কিছুটা নড়াচড়া করা যায়। কাঁধ ঘোরানো, গলা প্রসারিত করা, কবজি ও আঙুলে হালকা ব্যায়াম এর মধ্যে পড়ে।লরি ডিয়ামস বিশেষভাবে সুপারিশ করেছেন ‘সোলিয়েস পুশ-আপ’ বা বসা অবস্থায় গোড়ালি তোলা-নামানো।

গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে নড়াচড়া করলে দেহের বিপাকক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

প্রতি ঘণ্টায় দাঁড়ানো_এখন স্মার্ট ঘড়ি বা মোবাইলে নোটিফিকেশন আসে প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়াতে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে এ ফিচার বন্ধ করে দেন।

তবে লরি ডিয়ামস মনে করিয়ে দেন, “প্রতি ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট পর উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট হাঁটা, শরীর টানটান করা বা ভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও মনোযোগ বাড়ায়।

তিনি আরও বলেন, এক-দুই মিনিটের জোরালো হাঁটা বা তেজি নড়াচড়া উচ্চমাত্রার ব্যায়ামের প্রায় সমান উপকার এনে দেয়।

দৈনন্দিন কাজে বাড়তি কষ্ট_সবাই জানি বাজারে বা অফিসে যাওয়ার সময় গাড়ি একটু দূরে রেখে হাঁটলে বাড়তি কদম জমে।

তবে তারাহ ডি লিয়ন মনে করেন, এর বাইরেও অনেক উপায় আছে। যেমন- একবারে সব বাজারের ব্যাগ না তুলে একাধিকবার আসা-যাওয়া করা, কাপড় সিঁড়ি বেয়ে কয়েকবারে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

লরি ডিয়ামস যোগ করেন, “হাঁটার সময় গতি পরিবর্তন করা বা নিরাপদ জায়গায় উল্টো, পাশ দিয়ে বা আড়াআড়ি হাঁটার মতো ভিন্নতা আনলেও শরীর নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ পায়।

কাজের তালিকায় নড়াচড়া যোগ_প্রতিদিনের কাজগুলো একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে নড়াচড়া বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। যেমন- সন্তানের খেলার সময়ে বসে না থেকে হাঁটা, টেলিভিশন দেখার সময় ‘স্ট্রেচিং’, বই বা গান শোনার সময় হাঁটা বা সাইকেল চালানো।

তারাহ ডি লিয়নের মতে, “সচেতনভাবে খুঁজলে প্রতিদিনই নড়াচড়া করার নতুন নতুন উপায় পাওয়া যায়।

বসে থাকার বিকল্প_লরি ডিয়ামস বলেন, “শরীর এক জায়গায় চুপচাপ বসে থাকার জন্য নয়, বরং নড়াচড়ার জন্য তৈরি।”তাই সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে কাজ করার ডেস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্যদিকে, চেয়ার বদলে বড় বল বা ভারসাম্য রাখার বিশেষ কুশন ব্যবহার করলে শরীর সামান্য দুলে বা নড়েচড়ে সক্রিয় থাকে। এতে মনোযোগও বাড়ে।

বেশি পানি পান_শরীরের সুস্থতার জন্য পানি পান করা যেমন জরুরি, তেমনি এটি নড়াচড়া বাড়ানোর সহজ কৌশলও। লরি ডিয়ামস বলেন, “যতবার পানি পান করবেন, ততবার বোতল বা গ্লাস ভরতে উঠতে হবে। আবার প্রস্রাব করতে গেলেও শরীর নড়বে।

ফলে সারাদিনে অনেকবার প্রাকৃতিকভাবে নড়াচড়ার সুযোগ তৈরি হয়।

নিজের শরীরের ওজন কাজে লাগানো_অফিসে বা ঘরে বসেই শরীরের ওজন ব্যবহার করে হালকা ব্যায়াম করা সম্ভব। যেমন- দেয়ালে ভর দিয়ে বুকডন, চেয়ারে বসে হাতের ভর দিয়ে ওঠা, স্কোয়াট, লঞ্জ বা বসা থেকে দাঁড়ানো-ওঠা।

লরি ডিয়ামস বলেন, চেয়ারের হাতল, দেয়াল বা দরজার ফ্রেমকেও ব্যায়ামের কাজে লাগানো যায়। মূল লক্ষ্য হল অলসতা ভেঙে ফেলা, অজুহাত না বানানো এবং যতটুকু সম্ভব শরীর সচল রাখা।

সূত্র_বিডিনিউজ ২৪ডট কম