প্রতিবন্ধী মা'মেয়ে থাকেন যাত্রী ছাউনিতে-ভিক্ষায় আয়ের উৎস 

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের বালাহৈর গ্রামের সুলতানা ইয়াসমিন একজন স্বামী পরিত্যক্ত নারী

প্রতিবন্ধী মা'মেয়ে থাকেন যাত্রী ছাউনিতে-ভিক্ষায় আয়ের উৎস 

নিয়ামতপুর নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের বালাহৈর গ্রামের সুলতানা ইয়াসমিন (৪৫) একজন স্বামী পরিত্যক্ত নারী। ৫-৬ বছর আগে অজানা এক রোগে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। তার একমাত্র মেয়ে তানজিলা খাতুন (১৬) সেও বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী। সুলতানার পিতৃালয়ে সৎ মায়ের কারণে যেতে পারেন না। এখন বাধ্য হয়ে যাত্রী ছাউনিতে গড়েছেন জীবন-সংসার। 

সুলতানা ইয়াসমিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডি গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে এবং উপজেলা সদরের বালাহৈর গ্রামের তাইজুল ইসলাম (খেন্টুর) স্ত্রী ছিলেন। 

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সদরের বাস টার্মিনালের যাত্রী ছাউনিতে শুয়ে রয়েছেন সুলতানা ইয়াসমিন। তার পাশে বসে রয়েছেন বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী মেয়ে তানজিলা খাতুন। এদিক সেদিক ছুটে রয়েছে জামা কাপড়, খাবার প্লেটে মাছি ভনভন করছে। দুর্গন্ধতে আশেপাশে দাঁড়ানোর জো নেই। বাধ্য হয়েই বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা অন্য কোথাও দাঁড়াচ্ছেন। 

সুলতানা ইয়াসমিন প্রতিবেদকে জানান, তিন বছর আগে তার স্বামী তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বাবার বাড়িতে সৎ মায়ের কারণে সেখানেও যাওয়া যায় না। কিছু ব্যক্তির সহায়তায় প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে কিছুদিন ছিলেন। এরপর থাকার জায়গা না থাকায় মাস তিনেক থেকে মেয়েকে নিয়ে যাত্রী ছাউনিতে বসবাস করছি। মেয়েটাও বড় হচ্ছে তার জন্য হলেও একটি ঘরের প্রয়োজন। মেয়েটা সারাদিন মানুষের কাছে হাত পেতে যা নিয়ে আসে তা দিয়েই একবেলা খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। চিকিৎসা করাতে না পারায় দিন দিন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। 

বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী মেয়ে তানজিলা খাতুন বলেন, আমার মাকে নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছি। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি একটি ঘর দিতেন তাহলে মা-মেয়ের কষ্ট লাঘব হতো। এভাবে থাকতে আর ভালো লাগে না।

আনন্দ নামের এক পথচারী বলেন, এদের দেখে অনেক কষ্ট হয়। বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে সহায়তা করেছি। সমাজের বিত্তবান ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যক্তিরা তাদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিলে তাদের কষ্ট লাঘব হতে পারে। 

সুমন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, যাত্রী ছাউনিতে তাদের বসবাসের কারণে যাত্রীরা ছাউনিতে দাঁড়াতে পারে না। তাদের থাকার ঘরের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমতিয়াজ মোরশেদ বলেন, তাদের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেলে তাদের অবশ্যই দেওয়া হবে।