নিয়ামতপুরে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণ জনমনে নানা কথা

পিইডিপি-৪ এর আওতায় নিয়ামতপুরে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ওয়াশব্লক। এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস সাধ্যমত চেষ্টা করেও কাজের মান ভাল করাতে পারছেননা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে

নিয়ামতপুরে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণ জনমনে নানা কথা

তৈয়বুর রহমান নিয়ামতপুর নওগাঁ প্রতিনিধিঃ পিইডিপি-৪ এর আওতায় নিয়ামতপুরে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ওয়াশব্লক। এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস সাধ্যমত চেষ্টা করেও কাজের মান ভাল করাতে পারছেননা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয় বন্ধের দিন (শুক্রবার ও শনিবার) নির্মান কাজ করেন ঠিকাদারের শ্রমিকরা। এমনকি বিভিন্ন বাহানা তৈরী করে অফিস ম্যানেজ করে ছাদ ঢালাইয়ের মত গুরুত্বপূর্ন কাজও হয় ছুটির দিনে। যখন দেখার কেউ থাকে না। এ সুযোগে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন তারা। ফলে নির্মান কাজের মান হচ্ছে নিম্নমানের। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সচেতন মহলে। চলমান কাজ পরিদর্শনে গিয়ে এর সত্যতাও পেয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, ওয়াশব্লক ব্যবহারে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য র‌্যাম্প তৈরী করা হয়েছে পার্কের খেলার স্লীপারের মত করে। এ র‌্যাম্প ব্যবহার শিশুদের জন্য মারাত্বক ঝুঁকি আনবে মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। অথচ রহস্যজনক কারনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজগুলো দেখেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা।

চলতি বছরে নিয়ামতপুরে ১৫/২০টি ওয়াশব্লক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হস্তান্তর করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। চলমান রয়েছে আরো ৫০/৬০ টি বিদ্যালয়ে। যাদের কাজের মান খুবই নিম্নমানের। হস্তান্তরিত ওয়াশব্লক ব্যবহারের দুই তিন মাসের মাথায় দেখা দিয়েছে নানান সমস্যা। ওয়াশব্লকের মেঝেতে জমে থাকে পানি। বৃষ্টি হলেই ছাদ ভেজা ভেজা হয়ে উঠে, ছাদের ইলেকট্রিক বাল্বের ভিতর দিয়ে ঝর্নার মত করে ভিতরে নেমে আসে পানি। এছাড়াও গেটে দেওয়া লোহার গ্রীলগুলো ঠিকমত কাজ করেনা। দরজার ছিটকানি ব্যবহারের আগেই খুলে পড়েছে দরজা থেকে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও ঠিকাদারকে এ সব বিষয়ে বারবার ফোন দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেননা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সরেজমিনে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের বনগাঁপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াশব্লক নির্মানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য যে রাম্প তৈরী করা হয়েছে তা অনেক উঁচু করে। দেখতে কিছুটা শিশুদের স্লীপার খেলার মত। যা প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্যবহার একেবারেই অযোগ্য মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লীষ্টরা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আমেনা খাতুন জানান, ওয়াশব্লকের কাজ চলমান রয়েছে তার। এমন উচু র‌্যাম্পে শিশুরা উঠবে কি করে তা ভেবে পাননা তিনি। এমন র‌্যাম্পে উঠতে গিয়ে নিশ্চিত দূর্ঘটনার শিকার হবে প্রতিবন্ধী শিশুরা। বিষয়টি অবহিত করলেও কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছেনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।

হরশৈল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দ দাস জানান, সম্প্রতি তার বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান ওয়াশব্লকের অবস্থা এমন ভিতরের ছাদে লাগানো ইলেকট্রিক বাল্বের ভিতর দিয়ে পানি পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে ছাদের ভিতর স্যাঁতসেতে হয়ে গেছে। রং বিবর্ণ আকার ধারন করেছে। ছাদ দিয়ে ভিতরে পানি পড়ায় ইলেকট্রিক সর্টসার্কিটের আশংকা করছেন তিনি। তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেননা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, উপজেলায় বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণের কাজ চলমান। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে কাজে ত্রুটি বিচ্যুতি পাওয়া যায়। তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে বিষয়গুলো অবহিত করে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, চুক্তি মোতাবেক ওয়াশব্লক ডিপটিউবয়েল এবং অন্যান্য স্থাপনা যথাযথভাবে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর জনস্বাস্থ্য বিভাগ ঠিকাদারের কাছে কাজ বুঝে নিবেন। এরপর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এমনটা অনুসরণ করা হচ্ছেনা। এ কারনেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বর্তমানে সরকারী বিধীমালা যথাযথ অনুসরণ করে আমাদের মনিটরিং জোরদার হওয়ায় কাজের গুনগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কিছু কিছু ঠিকাদার দীর্ঘদিন থেকে কাজ অসম্পন্ন অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। বিষয়টি উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কাজ বন্ধ রেখেছেন এমন ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, নিয়ামতপুরকে মৌখিক ভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ সমস্ত বিষয়ে নিয়ামতপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী বাবুল আক্তারের মুঠোফোনে কল দিয়ে রিং হলেও কলটি রিসিভ হয়নি। পরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কাজের বিষয়ে   

কিছু কিছু বিদ্যালয় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সত্যতা সাপেক্ষে ঠিকাদারের নিকট থেকে সঠিকভাবেই কাজ করে নেয়া হবে বলেন তিনি।