নওগাঁয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসা উচ্ছেদের চেষ্টা

নওগাঁয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসা উচ্ছেদসহ জমি দখলের চেষ্টা এবং এমন অপকর্মে বাঁধা প্রধান করায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা মারধর, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

নওগাঁয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসা উচ্ছেদের চেষ্টা

এ বি এস রতন স্টাফ রিপোর্টার : নওগাঁয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসা উচ্ছেদসহ জমি দখলের চেষ্টা এবং এমন অপকর্মে বাঁধা প্রধান করায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা মারধর, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।  

জেলার মান্দা উপজেলার ভাঁরশো ইউনিয়নের বিল উথরাইল(উত্তর পশ্চিম পাড়া) গ্রামবাসীরা এমন অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের সত্যতা প্রমানে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য এবং স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে বিল উথরাইল পশ্চিম পাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করে আসছেন কুসুম্বা গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র রবিউল ইসলাম, ইয়ার আলীর পুত্র আঃ রশিদ, মৃত সাবেদ আলীর পুত্র মামুন এবং বিলউথরাই(পূর্ব পাড়া) গ্রামের মৃত ফজের আলীর পুত্র আতাউর রহমান, সোলাইমান গাইনের পুত্র সোহরাব ও আলম এবং আতাউর রহমানের পুত্র জামিনুর রহমান। উক্ত মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৬৯ সাল থেকে আজ অবধি আরবি, বাংলা সহ ধর্মীয় শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্নে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি প্রায় ৮২ শতাংশ সম্পত্তি ওয়াকফ্ হিসেবে দান করেন। তবে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য না হলেও বিগত দিনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একটি ভিত্তিহীন দলিল তৈরি করেন এবং বর্তমানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসাটি উচ্ছেদ করার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক গ্রামবাসী। গ্রামবাসীরা আরও জানান, উক্ত সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল চেষ্টাকালে বাঁধা দিলে অভিযুক্ত ব্যাক্তিরাসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহীনি দেশিয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে অর্তকিত হামলা চালায়। ওই হামলায় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুরত্বর আহত হলে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, এরমধ্যে কয়েকজন এখনো চিকিৎসাধী অবস্থায় রয়েছেন।এমন নির্মম ঘটনার পরেও গ্রামবাসীদের দিন কাটছে নানা আতঙ্কে। কিন্তু কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম নামের একজন জানান, আমাদের এই মাদ্রাসাটি বহুবছর ধরে এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। বিগত প্রায় ১৩ বছর যাবৎ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠানটি উচ্ছেদ করার পায়তারা করছে। তাদের এসকল অন্যায় কর্মকান্ডের বিরোধিতা করতে গেলে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহীনি দ্বারা আমাদের মারধর করেন, অথচ তারাই আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছেন। প্রকাশ্যে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ায় পুরো গ্রামবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে জানান তিনি। 

এব্যপারে স্থানীয় নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন ধরে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে আসছে। তাছাড়া মাদ্রাসার মাঠ ঈদগাহ মাঠ হিসেবে গ্রামবাসীর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, শুধু তাইনয় গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের জানাজার নামাজও আদায় করা হয় মাদ্রাসা মাঠে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে উক্ত সম্পত্তি দখল চেষ্টা করছেন। আমি চাই প্রতিষ্ঠানটি এসকল অসাধু চক্রের কালো থাবা থেকে মুক্তি পাক, তৃনমূল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা বিস্তারে মাদ্রাসাটি টিকে থাকুক অনন্তকাল। 

স্থানীয় জান্নাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, আমাদের ছোট ছোট বাচ্চার এই মাদ্রাসা থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করে, আমাদের গ্রামের আশেপাশে আর কোন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, তাছাড়া প্রায় ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নেই। আমরা চাই মাদ্রাসা উচ্ছেদের অপচেষ্টা যারা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার জোর দাবী জানান তিনি। 

এবিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিকবার একাধিক ব্যক্তিদের ফোন করা হলে রবিউল ইসলাম নামের একজনের মতামত পেতে সক্ষম হন প্রতিবেদক, তিনি মুঠোফোনে জানান, আমরা উক্ত সম্পত্তি দখল করতে যাইনি, মূলত বিবাদমান এলাকায় বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তি রয়েছে যার মালিক স্থানীয় ভুমিহীনরা। ওই মাদ্রাসার সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, মাদ্রাসার সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয় তবে যেখানে মাদ্রাসাটি কার্য়ক্রম পরিচালনা করে আসছে তা মাদ্রাসার সম্পত্তি নয়। বিল উথরাইল পশ্চিম পাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই বলেও দাবী করেন তিনি।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তাদের এই বিরোধ চলমান রয়েছে। সম্প্রতি পূর্ব বিবাদের জের ধরে মারামারির ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং সে মামলায় ৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।