চট্টগ্রামের ফুসফুস-সিআরবি
প্রাচীন পর্যটক ও ঐতিহাসিকেরা যে চট্টগ্রামকে ‘‘অত্যুচ্চ শৈলপ্রাচীর মণ্ডিত, হরিদ্বর্ণ বৃক্ষরাজি-সুশোভিত’’ বলে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সামান্য স্মৃতিচিহ্ন চট্টগ্রামে 'ফুসফুস' সিআরবিকে আঁকড়ে ধরে৷

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাচীন পর্যটক ও ঐতিহাসিকেরা যে চট্টগ্রামকে ‘‘অত্যুচ্চ শৈলপ্রাচীর মণ্ডিত, হরিদ্বর্ণ বৃক্ষরাজি-সুশোভিত’’ বলে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সামান্য স্মৃতিচিহ্ন চট্টগ্রামে 'ফুসফুস' সিআরবিকে আঁকড়ে ধরে৷
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরের প্রাচীনতম স্থাপনার একটি সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং)। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সিআরবি লাল রঙ্গের ভবন গুলো৷ সিআরবির সাত রাস্তার মোড় ঘিরে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। রয়েছে শিরীষতলা সহ বেশ কিছু নান্দনিক স্থাপনা। শিরীষতলায় বসে জমিয়ে আড্ডা দেয় নানা বয়সী মানুষজন, বিকেল হলে শুরু হয় ফুটবল, ক্রিকেট খেলা। সাথে দেখা মিলবে ১৮৯৯ সালে তৈরী বাংলাদেশ এর প্রথম বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিন। সিআরবি পাহাড়ের উপরে আছে হাতির বাংলো। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে রেলওয়ের শহীদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্মৃতিফলক আছে সিআরবি এলাকায়। সিআরবির পূর্ব দিকে রাস্তায় রেলওয়ে হাসপাতাল অবস্থিত। যেটা একসময় ফিরিঙ্গি অফিসারদের ক্লাব ছিলো, কর্মক্লান্ত কর্মকর্তারা অফিসের বাইরের সময়টুকু এখানে আমোদ-প্রমাদ করে কাটাতেন, আড্ডা দিতেন।
সিআরবি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও বিনোদনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে । এখানে প্রতিবছর উৎসবমুখর ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে- বাংলা নববর্ষ উৎসব, রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণ উৎসবসহ আনন্দঘন নানান লোকজ ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এসব অনুষ্ঠান গুলোতে বাঙালি খুঁজে পায়-তাদের শেকড়ের সন্ধান-ঐতিহ্যের গৌরবগাথা।
১৮৬২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তদানিন্তন পূর্ববঙ্গের দর্শনা থেকে জাগতি পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম ঐতিহ্যবাহী বাষ্প ইঞ্জিনের গোড়াপত্তন করে যা ৫৩.১০ কি.মি. ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে এতদ্বাঞ্চল রেলপথের সংযোগ সাধন করে। ১৮৯১ সালে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তখন ১৬/১১/১৮৯১ ইং, গেজেটমূলে ফেনী থেকে রেলওয়ে চট্টগ্রামের বটতলী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যই কেন্দ্রীয় রেল ভবন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রাম। মূলত সিআরবি প্রতিষ্ঠা করা হয় চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ও চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন সুবিধাকে রেলওয়ের সাথে সমন্বিত করার জন্য।
সিআরবি কখন যাবেন? বিকালের সময়টায় মানুষের সমাগম বেশি থাকে এবং পরিবেশটা খুব ভাল লাগে। সরকারি ছুটির দিনগুলিতে মানুষের আনাগোনা এতো বেশি থাকে যে ভালো করে ঘুরে দেখার সুযোগ হয়না, তাই বন্ধের দিন ছাড়া সিআরবি যাওয়া ভালো। আর রাতের বেলার নিয়ন আলোয় সিআরবি আরো সুন্দর হয়ে উঠে।
কিভাবে যাবেন? ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রামের রেলস্টেশনে আসলে সেখান থেকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে যাওয়া যায়। আর ঢাকার এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দ মত বাসে এসে চট্টগ্রাম শহরে, এ কে খানে নামবেন এবং সেখান থেকে সি এন জি (১৫০ টাকা) বা সিটি বাসে (১৫ টাকা) করে চলে যাবেন সি আর বি ।
নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা সময়, আরাম আর মানসিক প্রশান্তির খোঁজে মানুষ এই সিআরবি শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে দেখতে আসে। সেখানকার শতবর্ষী বৃক্ষ ঘেরা ছায়া-সুশীতল বাতাস ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। পুরো এলাকায় দৃষ্টিনন্দন আঁকা-বাঁকা রাস্তা ও উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড় টিলার এই বিরাট এলাকাটি অঘোষিত ভ্রমনের জায়গা হিসেবে যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামের জনসমাজ ছুটে আসে সিআরবির এই ছায়া ঘেরা-নির্জন পরিবেশে দু’দ- সুস্থির নি:শ্বাস নিতে। আর সিআরবির বৃক্ষগুলো যেন এক একটি অক্সিজেন কারখানা। তাই সিআরবিকে চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হয়।