জালিয়াতির ফাঁদে এক ব্যবসায়ী: মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচারের শিকার আসিফ মাহফুজ
ব্যবসা করা কি সত্যিই সহজ? বিশেষ করে যখন একজন সফল ব্যবসায়ী প্রতারণা, হয়রানি, এবং মিথ্যা মামলার শিকার হন? রাজশাহীর খ্যাতনামা ডেভেলপার কোম্পানি স্যানভ্যালী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মাহফুজ সনির বর্তমান পরিস্থিতি যেন এই প্রশ্নেরই জ্বলন্ত উদাহরণ

সজল মাহমুদ রাজশাহী প্রতিনিধি : ব্যবসা করা কি সত্যিই সহজ? বিশেষ করে যখন একজন সফল ব্যবসায়ী প্রতারণা, হয়রানি, এবং মিথ্যা মামলার শিকার হন? রাজশাহীর খ্যাতনামা ডেভেলপার কোম্পানি স্যানভ্যালী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মাহফুজ সনির বর্তমান পরিস্থিতি যেন এই প্রশ্নেরই জ্বলন্ত উদাহরণ।
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে যিনি শহরের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, এমনকি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার বিরুদ্ধে হওয়া ষড়যন্ত্রের চিত্র তুলে ধরেন।
২০১৪ সালে সিনথিয়া সিফাত অনি নামে এক নারী তার দাদু লন্ডনপ্রবাসী ক্যাপ্টেন মাহমুদুল আমিনের সঙ্গে রাজশাহীতে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্যানভ্যালী লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট কেনা। ১২৭৫ স্কয়ার ফিটের ওই ফ্ল্যাটটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রির চুক্তি হয়।
প্রথমে ক্যাপ্টেন আমিন পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন এবং পরে সিনথিয়া সিফাত নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ মে উভয়ের নামে ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়। তবে কিছুদিন পর সিনথিয়া সিফাত জানান, তিনি তার নাম সরিয়ে ক্যাপ্টেন আমিনের ভাই আহমাদুল আমিনকে নমিনি করতে চান।
কিন্তু সমস্যার শুরু হয় তখন, যখন ক্যাপ্টেন আমিন নিজেই ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি আসিফ মাহফুজকে জানান, তিনি সিনথিয়া সিফাতের সঙ্গে আর এই ফ্ল্যাটের মালিকানা রাখতে চান না এবং ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর না করার অনুরোধ করেন।
পরবর্তীতে সিনথিয়া সিফাত এককভাবে ফ্ল্যাটের মালিকানা দাবি করে আসিফ মাহফুজের অফিসে আসেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে চাপ দিতে থাকেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দেন বলে অভিযোগ করেন আসিফ মাহফুজ।
তিনি আরও বলেন, ক্যাপ্টেন আমিন তাকে ইমেইলের মাধ্যমে বারবার অনুরোধ করেছেন যেন তিনি সিনথিয়া সিফাতকে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করেন, কারণ এটি যৌথ মালিকানার সম্পত্তি। পরবর্তীতে এই সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কিন্তু এর মধ্যেই সিনথিয়া সিফাত একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন, যেখানে উল্লেখ ছিল যে ক্যাপ্টেন আমিন তার মালিকানা সিনথিয়া সিফাতকে নোটারির মাধ্যমে হস্তান্তর করেছেন।
এই জালিয়াতি ধরা পড়ে যখন আসিফ মাহফুজ ঢাকার নোটারি পাবলিক এম আর এস জেবুন্নেছার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে এই দলিলে তার কোনো স্বাক্ষর ছিল না এবং এটি পুরোপুরি জাল।
এরপর ২০২৩ সালে আসিফ মাহফুজ ঢাকার সিএমএম কোর্টে সিনথিয়া সিফাত ও তার সহযোগী আবু তালহা রায়হানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন (মামলা নং: ৬৯১/২০২৩)।
আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত শুরু করে এবং দীর্ঘ ১৮ মাসের পর তদন্তে নিশ্চিত হয় যে এই দলিল সম্পূর্ণ জাল ও প্রতারণামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
সিনথিয়া সিফাত প্রতিশোধ নিতে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় আসিফ মাহফুজের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি তাকে হুমকি দেওয়া ও প্রতারণার অভিযোগ তোলেন। শুধু তাই নয়, এক অনলাইন সাংবাদিকের মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে আসিফ মাহফুজকে প্রতারক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহফুজ বলেন, "আমরা ৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছি, যার মধ্যে ৪৭টি হস্তান্তর করা হয়েছে। যদি আমরা প্রতারক হতাম, তাহলে এতোগুলো ফ্ল্যাটের মালিকানা বুঝিয়ে দিতাম না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচার করা হয়েছে, আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
একজন সৎ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে আসিফ মাহফুজ চান, আইনের সঠিক প্রয়োগ হোক। তার বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক এবং যারা এই জালিয়াতি ও অপপ্রচার করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।
এটি শুধু একজন ব্যবসায়ীর লড়াই নয়, এটি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক নীতির স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের লড়াই। যদি একজন সফল উদ্যোক্তা এভাবে হয়রানির শিকার হন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক ব্যবসায়ী এ ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। তাই প্রশাসনের উচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সুবিচার নিশ্চিত করা।