বড়ভাই ইয়ামিন ইকবালও গুগলে এবার মেটা-মাইক্রোসফটে ডাক পেলেন চট্টগ্রামের মোহাইমিন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বখ্যাত টেক জায়ান্ট মেটা এবং মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মোহাইমিন ইকবাল

বড়ভাই ইয়ামিন ইকবালও গুগলে এবার মেটা-মাইক্রোসফটে ডাক পেলেন চট্টগ্রামের মোহাইমিন

জাবেদ হোসাইন হাটহাজারী প্রতিনিধি:সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বখ্যাত টেক জায়ান্ট মেটা এবং মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মোহাইমিন ইকবাল। তিনি চট্টগ্রাম নগরের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের চৌধুরীহাট এলাকার সন্তান। চবির কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

জানা গেছে, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে চবির কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন গাজী মোহাইমিন ইকবাল। স্নাতক শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে দেশটির সান জোসে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর করছেন। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত দুই টেক জায়ান্ট মেটা ও মাইক্রোসফটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডাক পেয়েছেন তিনি। 

মোহাইমিন ইকবালের বড়ভাই ইয়ামিন ইকবাল চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) পড়ার সময় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার সাথে জড়িত ছিলেন। যিনি পরবর্তীতে আরেক টেক জায়ান্ট গুগলে চাকরির সুযোগ পান। বড়ভাইকে দেখেই প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি ভালোবাসা জম্মে তার। নিজেও নিয়মিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন মোহাইমিন।

চায়ের আড্ডা, ক্যারিয়ার ভাবনা, বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়েও মোহাইমিনের সঙ্গী ছিল প্রোগ্রামিং।বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়িগুলোতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, গান, কবিতা, গল্পে মেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সে ঝুপড়িতেই তিনি বন্ধুদের সাথে প্রোগ্রামিং প্রবলেম নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠতেন। কখনো কখনো ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে বসেই ল্যাপটপে প্রবলেম সলভ করতে লেগে পড়তেন তিনি। এক সময় ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রদের সঙ্গে ইন্টার ইউনির্ভাসিটি প্রোগ্রামিং কনটেস্টে (আইইউপিসি) অংশ নিতে শুরু করেন মোহাইমিন। কয়েকবার শীর্ষস্থানও দখল করেন তিনি। 

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আমাকে জীবনের কিছু সেরা বন্ধু ও অসাধারণ কিছু সিনিয়র উপহার দিয়েছে। যাদের সাথে কাটানো সময় আমার জন্য অমূল্য। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রবলেম সলভিং নিয়ে গভীর আবেগই আমাকে এই লেভেলের স্কিল আর যোগ্যতা তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এভাবেই প্রোগ্রামিং নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন গাজী মোহাইমিন ইকবাল।’ 

মোহাইমিন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের দুই টেক জায়ান্ট মেটা (Meta) এবং মাইক্রোসফটে (Microsoft) সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। আমি মেটার প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। এ মাসের ১৮ তারিখ আমি মেটায় যোগ দিব।

‘আমাদের বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের সিনিয়র সুমিত সাহা ভাই টেক জায়ান্ট গুগলে ঢুকেছিলেন। তিনি ছিলেন চবির সিএসসি বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থী যিনি কোনো টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। এখন উনি মাইক্রোসফটে আছেন। আমার সামনেও সুযোগ এলো মাইক্রোসফট অথবা মেটার মতো টেক জায়ান্ট কোম্পানি বেছে নেওয়ার। এটা অন্যরকম কিছু আমার জন্য।’ 

চবির এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেটাতে আবেদন করলাম। প্রথমে অনলাইন এসেসমেন্ট ছিল, যেখানে ৪টা কোডিং প্রবলেম দেওয়া হয়। এরপর পাশ করার পর ৩টি ৪৫ মিনিটের ইন্টারভিউ রাউন্ড হয়। ভালো করার পর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পাই। মাইক্রোসফটের প্রসেসও অনেকটা একই।’

তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে সুযোগ পেয়েছি। যেখানে আমি সবচেয়ে চৌকস এবং সবচেয়ে মেধাবী ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবো। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমি অনেক কিছু শিখতে চাই, দক্ষতা বাড়াতে চাই এবং এমন একজন মানুষ হতে চাই যার ওপর অন্যরা নির্ভর করতে পারে।’

‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার মেটাতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। আমি চাই, আমাদের দেশ উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ হোক। যেন বিশ্ব আমাদেরকে একটি উদাহরণ হিসেবে দেখে। আশা করি, ইনশাআল্লাহ একদিন বাংলাদেশের নিজস্ব টেক জায়ান্ট থাকবে। যা সারা বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করবে এবং গর্ব করবে যে এটি বাংলাদেশ থেকে এসেছে।’

মোহাইমিন আরও বলেন, ‘আমি যখন যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করবো তখন হয়তো দেশের জন্য কিছু করতে পারবো।’এভাবেই নিজের স্বপ্ন ও অনুভূতির কথা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি তরুণ গাজী মোহাইমিন ইকবাল। 

তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এমন একটি কিছু খুঁজে বের করো, যা তুমি সত্যিই ভালোবাসো। তারপর সেই জিনিসে নিজেকে উন্নত করতে কঠোর পরিশ্রম করো। আমার মা সবসময় একটা কথা বলেন— সুযোগ সবার কাছেই আসে, কিন্তু কেবল প্রস্তুতরাই সেটা কাজে লাগাতে পারে। আমিও তোমাদের সে কথাই বলবো।’

গাজী মোহাইমিন ইকবালের বাবা গাজী মো. ইকবাল মাহমুদের পাট কারখানা রয়েছে। তিনি বিদেশে পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেন।