চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কমিউনিটি সংলাপ

কন্যাসন্তানদের বোঝা না ভেবে মানুষ ভাবতে হবে বাল্যকালে তাদের বিয়ে না দিয়ে তাদেরকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে হবে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কমিউনিটি সংলাপ

কন্যাসন্তানদের বোঝা না ভেবে মানুষ ভাবতে হবে, বাল্যকালে তাদের বিয়ে না দিয়ে তাদেরকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে হবে। তারা যেন পুরুষের পাশাপাশি শিক্ষা-দীক্ষায় সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারে, নিজের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই স্বপ্ন দেখাতে হবে। তাদের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্কটা হতে হবে বন্ধুত্বের।

শুক্রবার বেলা ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরেরবাগানে অনুষ্ঠিত বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ধর্মীয় নেতা ও অভিভাবকদের সঙ্গে কমিউনিটি সংলাপে বক্তারা এমন মতামত তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিরাও বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা বলেন, গ্রাম আদালতে বিচারপ্রার্থী অধিকাংশই হচ্ছে বাল্যবিয়ের শিকার এবং তালাকপ্রাপ্ত। অনেকেই দালালের মাধ্যমে এফিডেভিট করে এবং এখন আগের মতো নিজের বাড়িতে বিয়ে না পড়িয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে বিয়ে দিচ্ছে। তারা জোরালোভাবে আইনের প্রয়োগ ও দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ইউনিসেফ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ বলেন- আমরা যদি বিশ্বকে জুম করে দেখি, তাহলে দেখতে পাবো ইউরোপ আসেরিকা কিংবা মিডলিস্টে বাল্যবিয়ে নেই। কোথায় আছে? আছে বাংলাদেশে। এই বাংলাদেশকে যদি জুম করি, তাহলে দেখব রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি এবং রাজশাহী বিভাগকে যদি দেখি তাহলে দেখব এই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে আবার সদর উপজেলায় আরো বেশি। অথচ এখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, মহারাজপুরে একটি বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে এক ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার ক’জন বান্ধবী আগে বিদ্যালয়ে আসত, এখন আর আসে না। সে ছাত্রী নাম ধরে ধরে বলল, ২০ জনের অধিক মেয়ে আসে না। অর্থাৎ অনুপস্থিত মেয়েগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে ভাবুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোন পর্যায়ে আছে। তাই জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা এবং অভিভাবকদের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে একযোগে কাজ করতে হবে।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও। তিনি তার বক্তব্যে বাল্যবিয়ে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত জেলা ঘোষণা করার আগে এই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডকে ঘোষণা করতে চাই। আসুন এখান থেকেই শুরু হোক।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক প্রভাতী মাহাতো, জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়াসমিন সুলতানা রুমা, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তোসিকুল আলম বাবুল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আখতার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল আলী, মহিলা কাউন্সিলর আনোয়ারা খাতুন পলি। ইউনিসেফ সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ার চেঞ্জ কমকর্তা মনজুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন- মহিলা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ হিল কাফি, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় চ্যাটার্জী, ঝিলিম ইউনিয়নের মহিলা সদস্য শওকত আরা সুইটি, আজাইপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসনে আরা বেগম, ছাত্রী বিপাশা ও মাসুমা খাতুন মৌ। সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শহীদুল হুদা অলক।