নওগাঁয় বিপৎসীমার ওপরে আত্রাই নদীর পানি
উত্তর জনপদের নদী খাল বিল কৃষি উপযোগী জেলা নওগাঁ টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নওগাঁর সব নদ-নদীর পানি

এ.বি.এস রতন স্টাফ রিপোর্টার : উত্তর জনপদের নদী খাল বিল কৃষি উপযোগী জেলা নওগাঁ টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নওগাঁর সব নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে জেলার আত্রাই নদীর পানি। এতে নদীর দুই তীরে অবস্থিত বেঁড়িবাধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে ছোট যমুনা নদীর পানি, তবে এখনো যমুনা নদীর পানিসমতল বিপৎসীমার নিচে রয়েছে । আর আত্রাই নদীর দুটি স্পটে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে পানি।
এদিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকেছে, ডুবে গেছে গ্রামের মাঠ-ঘাট। নওগাঁর একাধিক উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জেলায় কয়েক হাজার বিঘা জমির পটল, মরিচ ও রোপণকৃত আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে ডুবে গিয়েছে । এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের ।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে দেওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আত্রাই নদীর মান্দা উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে পানি সমতল বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর পানি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া আত্রাই নদীর পানি জেলার ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার, মহাদেবপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ছোট যমুনা নদীর পানি নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা যায় ।
এদিকে পূর্ণভবা নদীর নীতপুর পোরশা পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
আত্রাই নদীর মান্দা উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ী, জোকাহাট, দ্বারিয়াপুর, নুরুল্লাবাদ, পারনুরুল্লাবাদ ও তালপাতিলা এলাকার অন্তত ১০টি বেড়িবাঁধকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের লক্ষ্মীরামপুর, আয়াপুর, পাঁজরভাঙ্গা, পলাশবাড়ী, মিঠাপুর, নিখিরাপাড়া ও গোয়ালমান্দাসহ অন্তত ২০টি পয়েন্টকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখতার জাহান সাথী বলেন, আত্রাই নদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে আমরা আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জরুরি সভা করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন- বালুর বস্তা, বাঁশ ও অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় শুকনো খাবার মজুত ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলা (অতিরিক্ত দায়িত্ব আত্রাই উপজেলা) নির্বাহী অফিসার রাকিবুল হাসান বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সেই মোতাবেক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার মজুত ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, নওগাঁ জেলার নদ-নদীর সব পয়েন্টের পানিসমতল বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আত্রাই নদীর জোত বাজার ও আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্ট ব্যতীত সব পয়েন্টে পানিসমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আমরা যথাযথভাবে মনিটরিং করছি। আশা করি কোনো জায়গায় সমস্যা হবে না।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান বলেন, সপ্তাহখানেক ধরেই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য বন্যার বিষয় মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।