নওগাঁর তুলসীগঙ্গা নদী দখল আর দূষণে মৃত প্রায়
নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা নদী। এর মধ্যে ছোট যমুনা নদীর অস্তিত্ব এখনো কোনোভাবে টিকে আছে। তবে খরস্রোতা তুলসীগঙ্গা তার রূপ-যৌবন হারিয়ে দখল আর দুষণে এখন মৃতপ্রায়
এবিএস রতন স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ: নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা নদী। এর মধ্যে ছোট যমুনা নদীর অস্তিত্ব এখনো কোনোভাবে টিকে আছে। তবে খরস্রোতা তুলসীগঙ্গা তার রূপ-যৌবন হারিয়ে দখল আর দুষণে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমলেও শুকনো মৌসুমে শুষ্ক অবস্থা। সেই সাথে চলে দখল উৎসব। গত ৩ বছর আগে নদীটি খনন করা হলেও কোন কাজেই আসছে না। নদীর গতিপথ স্বাভাবিক না থাকায় আবারও কচুরিপানায় স্তুপ জমেছে। তুলসীগঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে সরকারের কার্যকর উদ্যোগই পারে নদীকে পুনরুজ্জীবিত করতে। নদী বাঁচলে বাঁচবে কৃষি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন।
জানা গেছে, নওগাঁর পার্শ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে সৃষ্টি হয়ে তুলসীগঙ্গা নদী নওগাঁর সীমানায় প্রবেশ করেছে। নওগাঁ সদর উপজেলার তিলোকপুর ইউনিয়নের ছিটকিতলা (ত্রিমোহনী) থেকে জেলার রানীনগর উপজেলার ত্রিমোহনীর চককুতুব রেগুলেটর পর্যন্ত তুলসীগঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। একসময় এ নদীর পানি দিয়ে আশপাশের জমি চাষাবাদ হতো। মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জালে ধরা পড়তো ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছ। আশপাশের জেলার ব্যবসায়ীরা পালতোলা নৌকায় ধান ও পাটসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য পরিবহণ করায় নদীর আশপাশের হাট-বাজার জমে উঠতো।
সত্তরের পরবর্তী সময়ে ছিটকিতলায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তারপর থেকে খরস্রোতা তুলসীগঙ্গা তার রূপ-যৌবন হারাতে বসে। নদীর পানির প্রবাহ না থাকায় কচুরিপানার স্তুপে পরিণত হয়েছে। পানিতে দূর্গন্ধ হওয়ায় মশা মাছির উপদ্রব বেড়েছে। বর্তমানে নদীর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। আর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে মৃতপ্রায় অবস্থা। তুলসীগঙ্গা নদীর পাশে চককুতুবে রেগুলেটর থাকলেও অপরপাশে বন্ধ রয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় পানি দূর্গন্ধ হয়ে পড়েছে। জলজপ্রাণীও বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তবে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য ছিটকিতলায় গতিরোধক বাঁধটি সরিয়ে সেখানে রেগুলেটর নির্মাণ করার দাবী স্থানীয়দের। এতে ছোট যমুনার সাথে সংযোগ হলে বর্ষা মৌসুমে পানি দিয়ে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা সম্ভব। নদী তার প্রাণ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি আবারও কর্মমুখী হয়ে উঠবে।
ভবানীপুর গ্রামের নদী পাড়ের বাসিন্দা সদিকুর রহমান ও আহসান আলী বলেন, ফসল চাষাবাদ ও বিভিন্ন সুবিধার জন্য নদী খনন করা হয়। এছাড়া নদীতে মাছ ধরা, গোসল করা হবে এবং সাংসারিক প্রয়োজন মেটানো হবে। কিন্তু সেসুবিধা আমরা পাচ্ছি না। নদীতে কচুরিপানার স্তুপ হয়েছে। নদীর পানি এতোটাই দূর্গন্ধ যে মশা-মাছির উপদ্রুব। মোট কথা নদীর যে প্রয়োজন ছিল সে প্রয়োজন আমরা অনুভব করছিনা।
নওগাঁর সমাজসেবক এমএম রাসেল বলেন- এক সময় এ তুলসীগঙ্গা নদীতে বড় বড় পালতোলা নৌকা চলতো। পাবনা ও জয়পুরহাট থেকে বণিকারা ব্যবসার জন্য ধান, পাট ও বিভিন্ন ফসল নিয়ে আসতো। তবে সত্তরের দশকে ছিটকিতলায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তারপর থেকে খরস্রোতা তুলসীগঙ্গা তার রূপ-যৌবন হারাতে বসে। এছাড়া নদীর প্রস্থতা বড় ছিল। এখন দখল আর দুষণে সরু হয়ে আসছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে ছিটকিতলায় রেগুলেটর নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ’র সাধারণ সম্পাদক নাইচ পারভীন বলেন, এক সময় নদীকে কেন্দ্র করে নগর ও সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেইসব নদীর অস্থিত্ব এখনো হারানো পথে। ময়লা ও আর্বজনা নদীতে ফেলায় পানি দুষণ হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় নদী ছোট হয়ে আসছে। মোট কথা মানুষকে সচেতন হতে হবে। নদীরও যে জীবন আছে তা অনেকেই আমরা জানি না। নদীকে বাঁচাতে হবে এবং নিজেদের প্রয়োজনে বাঁচাতে হবে। নদী সচল না থাকলে বিভিন্ন জীববৈচিত্র থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এছাড়া নদী কেন্দ্রীক জীবন জীবিকার সাথে যারা জড়িত তারাও বঞ্চিত হবে। এজন্য নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফয়জুর রহমান বলেন- নদীর গতিপথ বিকল্প ভাবে ফিরাতে প্রায় ২ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে অনেক টাকা ব্যয় হবে। তবে ইতোমধ্যে ছিটকিতলায় ছোট যমুনা নদীর সাথে সংযোগ স্থাপনে রেগুলেটর নির্মাণে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগামীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) প্রকল্প পাশ হলে কাজ শুরু হবে।