বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বুলির অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন
ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ আ'লীগ নেতা অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলির অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
জেলা সদরে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারীতা,নানা অনিয়ম, দূর্ণীতি,বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, শিক্ষকদের ফাইল আটকে রাখা,অবৈধভাবে এবং নানা অযুহাতে বাধ্য করে অর্থ আদায় করা, শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা, নারী শিক্ষকদের ছবি তুলে ভাইরালের হুমকী, অনিয়ম করে কলেজ চত্বরের গাছ বিক্রি, আওয়ামীলীগ পরিবারের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরন,দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানে না আসাসহ নানা অভিযোগে তাঁর অপকর্মের বিচার ও চাকরি থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার কলেজের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির ক্ষমতার অপব্যবহার,স্বেচ্ছাচারীতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্ণীতির চিত্র তুলে ধরেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লেখক-গীতিকার, কলামিষ্ট ও সাপ্তাহিক সোনামসজিদ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক (বর্তমানে পদত্যাগী) মোহাঃ জোনাব আলী। নির্যাতন ও হয়রানী এবং বেতন বন্ধ রাখাসহ নানা অভিযোগ তুলে কথা বলেন, কলেজের ইসলামের ইতিহাস'র প্রভাষক সৈয়দা রেহানা আশরাফী, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোঃ শাহজালাল উদ্দিনসহ অন্যরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আরিফ,বায়েজিদ,মোসাব্বিরসহ অনেকে।
মানববন্ধনে নানা অভিযোগের সাথে বক্তারা আরও বলেন, তিনি প্রায়শই কলেজে না এসে পরে প্রতিদিনের স্বাক্ষর করে নেন। এছাড়া, মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কলেজে না এসেও প্রতিদিনের স্বাক্ষর করেছেন বলেও অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তবে, বিচার ও অপসারণ এর দাবীতে মানববন্ধন চললেও কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলি মঙ্গলবার কলেজে আসেন নি। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থেকে অধ্যক্ষ গত ১৩ আগষ্ট কলেজে আসেন। মানববন্ধন শেষে কলেজের সকল রুমে তালা দিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। বুধবারের মধ্যে কলেজে এসে স্বসম্মানে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। মানবন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব উল ইসলামের হাতে অধ্যক্ষের অপসারনের জোর দাবী জানিয়ে একটি আবেদন জমা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে, কলেজের সামনে মানববন্ধন প্রস্তুতি চলাকালে আওয়ামীলীগ পরিবারের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ও অধ্যক্ষের কাছ থেকে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা এবং বহিরাগতদের দিয়ে কলেজের শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের উপর হামলার চেষ্টা করে। পরে কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করলে অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন সটকে পড়ে।
উল্লেখ্য, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারীতা, নানা অনিয়ম, দূর্ণীতি, বিভিন্ন দোকানীর টাকা পরিশোধ না করাসহ নানা অপকর্মের বিচার ও চাকরি থেকে অপসারণের দাবি তোলেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী, এলাকাবাসি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ। জেলা সদরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অনেকে অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি আওয়ামীলীগের নেতা পরিচয়ে চাকরী দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া জেলা শহরের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স, কাপড়, হোটেল, রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন দোকানে আওয়ামী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে লাখ লাখ টাকার মালামাল বাকি নিয়ে আজো সে সব টাকা পরিশোধ করেননি। কেউ তার কাছে টাকা চাইতে গেলেই তিনি তাকে মামলা দেয়াসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে থাকতেন। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকী দিয়ে তার কাছে থাকা পিস্তল বের করে নাড়াচাড়া করতেন, যাতে সবাই তাকে ভয় করে তার কাছে টাকা না চান। তার কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা পাবেন এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা শহরের মেসার্স সৌদিয়া স্টীলের মালিক মোঃ আব্দুল রাকিব, কামাল ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক ইকবাল আহম্মেদ, বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান, সেতু হার্ডওয়ারের মালিক নাজিম উদ্দিন, সোনালী আইপিএস এর মালিক খোকন, নিউমার্কেটের মোশাররফ ক্লথ স্টোর এর মালিক, রাজিব সুজুকি মটর সাইকেল এর মালিক, আলাউদ্দীন চাইনিজ হোটেল এর মালিক, শামীম ম্যাটস এর মালিক, মেসার্স সানাউল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক আলহাজ মোঃ আমিনুল ইসলাম, মেসার্স সোনালী ট্রেডার্স এর মালিক প্রমূখ। এদিকে, মহারাজপুর ইউনিয়নের অনেকে জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে জমি-জমাসহ বিভিন্ন বিষয়ের
বিচারের নামে বাদি-আসামীর কাছ থেকে জামানত ও জরিমানা নিয়ে কাউকেই সেই টাকা ফেরত দিননি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট সকল অফিস-আদালত খুলে দেয়া হলেও তিনি কলেজে আসেন ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার। আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ আমলের সকল অনিয়মের বিচার এবং তাকে কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করার দাবি করেছেন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়া জনগণ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ।