ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক নওগাঁর মরহুম ডা: মনজুর হোসেনের পরিবার আজও অবহেলিত-অরক্ষিত সমাধিস্থল

প্রথমে বাংলা ভাষা এরপর লাল-সবুজের বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারী মানে ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারী এলেই মনে পড়ে যায় ১৯৫২সালে ভাষা আন্দোলনকারী সৈনিকদের কথা

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক নওগাঁর মরহুম ডা: মনজুর হোসেনের পরিবার আজও অবহেলিত-অরক্ষিত সমাধিস্থল

এ.বি.এস রতন স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ : প্রথমে বাংলা ভাষা এরপর লাল-সবুজের বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারী মানে ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারী এলেই মনে পড়ে যায় ১৯৫২সালে ভাষা আন্দোলনকারী সৈনিকদের কথা। ভাষার জন্য ১৪৪ধারা ভেঙ্গে রাজপথে নেমে করা আন্দোলনের অন্যতম একজন সৈনিক ছিলেন নওগাঁর সুলতানপুর পন্ডিত পাড়া গ্রামের সন্তান ডা: মনজুর হোসেন। কিন্তু আজও তার পরিবার অবহেলিত। কেউ এই পরিবারের খোঁজ রাখে না। অরক্ষিত মনজুরের সমাধিস্থল। ২০০২ সালে শুধুমাত্র মরণোত্তর একুশে পদক ছাড়া এই ভাষা সৈনিকের পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি রাষ্ট্রীয় কোন সম্মাননা কিংবা সুযোগ-সুবিধা।

সূত্রে জানা গেছে ১৯২৮সালের ১৫জুন জন্ম নেয়া মনজুর হোসেন ভাষা আন্দোলনের সময় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ভাষা আন্দোলনের পূর্বে অনেক আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয় আন্দোলনকারী। ভাষা আন্দোলনের পর প্রথম শহীদ মিনার তৈরির তিনিই ছিলেন অন্যতম কারিগর। ভাষা সৈনিকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পেয়েছিলেন “বিপ্লব দা” উপাধি। জেলে গেছেন বহুবার। নিজের পরিবারের জন্য তিনি কিছুই করে যেতেন পারেননি। ডাক্তারী পড়া শেষ করে নিজ এলাকায় এসে গরীব মানুষের মাঝে আমৃত্যু বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডা: মনজুর হোসেন। ১৯৬৮সালের ৪ডিসেম্বর জাতির এই সূর্যসন্তান মৃত্যু বরণ করেন।

বর্তমানে তার পরিবারে রয়েছেন শতবর্ষী তার স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। অনেক কিছু না পাওয়ার ব্যথা নিয়ে শতবছরের কোঠায় এসে ডা. মনজুর হোসেনের স্ত্রী ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। মৃত্যুর পর ডা. মনজুর হোসেনের কবরটি ছিলো অরক্ষিত। পরে ২০১১সালে নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের পক্ষ থেকে তার কবর পাকা করে দেওয়া হয়েছে আর পরিবারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কবরের পাশে একটি ছোট শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিবছরই ভাষা দিবসে পরিবার, একুশে পরিষদ ও সুলতানপুর ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হলেও আজ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনজুরের কবরে প্রদান করা হয়নি ফুলেল শ্রদ্ধা। অরক্ষিতই পড়ে আছে মনজুরের সমাধিস্থল। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো এই পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকারের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করা হয় না। আজ পর্যন্ত স্ত্রীর কপালে জোটেনি রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ-সুবিধা কিংবা কোন ভাতার।

ডা: মনজুর হোসেনের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা অনেকেই জানান, ভাষা সৈনিকদের প্রতি দেশের সরকারের এমন অবহেলা সত্যিই কষ্ট দেয় পীড়া দেয়। স্বাধীনতার এতো বছরেও এই বীর সৈনিকের কবরটিতে স্পর্শ করেনি আধুনিকতার কোন ছোঁয়া। আজও অরক্ষিত অবস্থায় কবরটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। দেশের সকল ভাষা সৈনিকদের প্রতি যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করতে নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

ডা: মনজুর হোসেনের ছেলে হাসান ইমাম তমাল বলেন ভাষা আন্দোলই হচ্ছে স্বাধীন বাংলার শেকড়। আর সেই শেকড়কে আমরা সবাই ভুলে গেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন করে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে আমরা ভাষা সৈনিকদের পরিবার কেন এতো অবহেলিত। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমরাও রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ সকল ধরণের সুযোগ চাই। আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভাষা সৈনিকদের অবদানের কথা ধরে রাখতে চাইলে রাষ্ট্রীয় ভাবে ভাষা সৈনিকদের পরিবারগুলোকে স্বীকৃতি জানানোর কোন বিকল্প নেই।

একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি এ্যাড. ডি.এম. আব্দুল বারী বলেন, ভাষা শহীদের পরিবারগুলোর প্রতি সরকারের এই অবহেলা ও উদাসীনতা খুবই কষ্ট দেয়। ভাষা আন্দোলন না হলে আমরা মায়ের ভাষা যেমন পেতাম না তেমনি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও পেতাম না। অথচ বছরে একবার ভাষা দিবসের দিনে একজন ভাষা সৈনিকের কবরে সরকারি ভাবে সম্মাননাও জানানো হয় না। খোঁজ খবর নেয়া হয়না এই ভাষা সৈনিকের পরিবারের। তাই ভাষার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন সেই সব হাতে গোনা সৈনিকদের কবরগুলোকে আধুনিকায়ন করাসহ পরিবারগুলোকে যথাযথ সকল ধরণের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার কোন বিকল্প নেই।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইবনুল আবেদীন জানান, নওগাঁর কৃতি সন্তান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ডা: মনজুর হোসেনের পরিবারকে সামাজিক মর্যাদা প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া এই পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন এই কর্মকর্তা।