১৫ বছর ধরে ঝুঁকিতে দক্ষিণ অঞ্চলের সাড়ে চার কোটি মানুষ

দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের একমাত্র যন্ত্র সিসমোগ্রাফ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি)। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত যন্ত্রটি সচল না থাকায় সম্প্রতি হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রাও জানা সম্ভব হয়নি

১৫ বছর ধরে ঝুঁকিতে দক্ষিণ অঞ্চলের সাড়ে চার কোটি মানুষ

মোঃ সজিব সরদার পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের একমাত্র যন্ত্র সিসমোগ্রাফ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি)। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত যন্ত্রটি সচল না থাকায় সম্প্রতি হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রাও জানা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ কার্যত সতর্কবার্তা বঞ্চিত।

‎বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারের সহযোগিতায় দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুটি জেলা শহরে স্থায়ীভাবে এসব সিসমোগ্রাফ যন্ত্র স্থাপন করা হয়।

‎বাংলাদেশের পক্ষে প্রকল্পে স্বাক্ষর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখ্তার।

‎পবিপ্রবিতে স্থাপিত যন্ত্রটি ২০১০ সালের অক্টোবরে কার্যক্রম শুরু করে এবং মাত্র দুটি ভূমিকম্পের তথ্য রেকর্ড করতে সক্ষম হয়। 

‎কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতেই যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয়। পরে একাডেমিক ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের সঙ্গে পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে পুনরায় সচল করা হলেও এক বছরের মধ্যেই আবার অকেজো হয়ে পড়ে।

‎বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের সময়ে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, সারফেস ও রিলে—এই চার ধরনের ওয়েভ নির্গত হয়। সারফেস ও রিলে ওয়েভ পৌঁছাতে এক থেকে দুই মিনিট সময় লাগে।

‎এ সময়টুকু আগেই সতর্ক সংকেত পাওয়া গেলে বড় ধরনের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং থাকলে এই যন্ত্র জনগণকে আগাম সতর্ক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

‎এছাড়া যন্ত্রের মাটির নিচে থাকা প্লেটের সাহায্যে ভূমির উচ্চতা বা ধসের প্রবণতাও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

‎যন্ত্রটির অপারেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনীবুর রহমান বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে জার্মানিতে রয়েছেন।

‎একই বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম তাওহীদুল ইসলাম জানান, “এটি অত্যন্ত পুরনো এনালগ প্রযুক্তির যন্ত্র। বর্তমানে বিশ্বে ডিজিটাল সিসমোগ্রাফ ব্যবহৃত হচ্ছে।যেহেতু যন্ত্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টভুক্ত, তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। তবে নতুন প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

‎পবিপ্রবির ভাইস–চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “১৫ বছর আগে প্রজেক্টের আওতায় স্থাপন করা এই সিসমোগ্রাফটি বহু আগেই অচল হয়ে যায়। পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে এটিকে আর সচল করা সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএসডিএম বিভাগ নতুন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ করছে। প্রকল্প প্রস্তুত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।