তাসেম আলী'র হস্তক্ষেপে হরিলুট চলছে চাঁপাইগ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিতে
তাসেম আলীর হস্তক্ষেপে হরিলুট চলছে চাঁপাইগ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিতে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়ন ও তার পার্শ্ববর্তী বরেন্দ্র ভূমি বেষ্টিত অঞ্চল ও মাঠ সমূহে সঠিক সময়ে চাষাবাদের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা না থাকায় অত্র চাঁপাইগ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ নামে সমবায় বিভাগ কর্তৃক নিবন্ধিত ও এলজিইডি কর্তৃক প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগানের মাধ্যমে ২০০৭ সালে মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে এই পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী সমিতি তার কমান্ডিং এরিয়ার সদস্যদের নিয়ে এবং তাদের জমিতে সেচ পাম্পের মাধ্যমে মহানন্দা নদী হতে পানি উত্তোলনের করে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করে উক্ত অঞ্চলের চাষযোগ্য এবং অনাবাদী জমিতে কৃষি ফসল ফলানো হয়।
সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর সমিতির সদস্যদের ভোটে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি দ্বারা সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রয়েছে। সমিতিটি
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম দুটি ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তৃতীয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে উক্ত ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি সেই বিএনপি জামাতের মূল দোষরা ক্ষমতায় বসে। ক্ষমতায় বসার পর হতেই প্রতিষ্ঠানটিকে বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ তাসিম আলী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার পরিবারের ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের ক্ষমতায় বসিয়ে এবং নিজস্ব লোকদের সদস্য ভর্তির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে এবং সমিতির সকল টাকা পয়সা ও সম্পদ সম্পতি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবহার এবং কুক্ষিগত করতে শুরু করে। সমবায় সমিতির আইন অনুযায়ী পরপর তিন মেয়াদে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকলে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেনা সে বিধান রয়েছে।
জানা যায়, মোঃ তাসেম আলী'র তিন মেয়াদ পূর্তি হয়ে যাওয়ার পর তিনি সমিতিতে প্রভাব বিস্তার এবং সমিতিতে প্রতিবছর এলজিইডি কর্তৃক পানির ট্রেন সস্প্রসারণ ও মেরামতের জন্য তিন থেকে চার কোটি টাকা বরাদ্দের অধিকাংশই বে-আইনিভাবে ভোগ দখল করার জন্য তার ছোট ভাই মোঃ বাশির আলীকে সাধারণ সম্পাদক পদে এবং অন্যান্য পদসমূহের তার চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, ভগ্নিপতি সহ নিকট আত্মীয়দের ক্ষমতায় বসিয়ে রাখেন।
বর্তমানে সমিতির সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রম এতটাই বেপরোয়া হয়ে যায় যে, অত্র সমিতি সেচ হতে আদায়কৃত অর্থ, সাধারণ সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাৎ এমনকি ডাসকো নামে একটি পানি সরবরাহকারী বেসরকারি সংস্থাকে সমিতির উন্নয়নের নামে প্রায় কোটি টাকার প্রকল্প পাইয়ে দিতে নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে সেই অর্থও লুটপাট করে।
এছাড়াও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি ও তাদের দোসর মোঃ তাশেম আলী সমবায় সমিতি আইন উপেক্ষা করে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত সমিতির নিজস্ব অফিস বন্ধ রেখে সমিতির অর্থে ব্যক্তিগত স্বার্থে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা নিবন্ধিত ঠিকানার বাইরে একটি অফিস স্থাপন করে সেখান থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
খবর সূত্রের, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) চাঁপাইনবাবগঞ্জ কর্তৃক সমিতির কার্যক্রম যাচাই করে ইতিপূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সমবায় অফিসে তথ্য প্রদান করা করেছেন।
অত্র জেলার সীমান্ত সংলগ্ন ভারত অধ্যুষিত হওয়ায় জানা গেছে, সদর উপজেলার প্রভাবশালী জামাত বিএনপি করা ব্যাক্তির কালো অবৈধ অর্থ প্রথমে সমিতিতে সঞ্চয় হিসেবে জমা করে পরে তা ব্যবস্থাপনা কমিটির মনপুত ব্যক্তিদের নামে ঋণ হিসেবে দেখিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতে পাচার করা হয়। এমনকি বিগত জাতীয় নির্বাচনে এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাসির আলী এবং তার ভাই প্রধান মাস্টারমাইন্ড মোঃ তাশেম আলী বিদেশ হতে কালো অর্থ সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি, ভোটার ও নেতাদের বিভিন্ন মাধ্যমে ভোটে কারচুপির কাজে এবং ভোট ক্রয়ের কাজে সদস্যদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে বিলি করেছেন।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর এ সমিতির নির্বাচনের আয়োজন করেছেন বর্তমান পরিষদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সম্পাদকসহ এই কুচক্রী মহলের উত্তোলনকৃত মনোনয়নপত্র সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী অবৈধ ঘোষণা করা হলে। তারা আপিল করলে আপিল বোর্ডও মনোনয়ন অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু এই কুচক্রি মহল সমিতির ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে মহামান্য হাইকোটে আপিলের মাধ্যমে তাদের অবৈধ সদস্যদের দ্বারা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের লক্ষে সদস্যদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সমিতির নির্বাচন কমিটিকে আদেশ প্রদানে রিট পিটিশন দাখিল করে এবং শেষ পর্যন্ত হাইকোটের রেফারেন্সে প্রতিক বরাদ্দ নিতে সক্ষম হয়ে নির্বাচন করছেন।
বর্তমানে এই সমিতির সভাপতি জাকিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাসির আলী। এই বিষয়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ তাসেম আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমিও দূর্নীতির বিরুদ্ধে। অডিট কমিটি দুর্নীতি পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন বলে ফোন কেটে দেন।