চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রেনে হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের বালা উদ্ধার করে দিলেন স্টেশন মাস্টার
চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোকাল ট্রেনে এক যাত্রীর হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের বালা উদ্ধার করে দিয়েছেন স্টেশন মাস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদন:চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোকাল ট্রেনে এক যাত্রীর হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের বালা উদ্ধার করে দিয়েছেন স্টেশন মাস্টার।
শনিবার সকালে হারানোর পর ওই বালাটি বিকালে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর প্রশংসায় ভাসছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্টেশন মাস্টার মো.ওবায়দুল্লাহ।
ওই ট্রেন যাত্রীর নাম জয়নব খাতুন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার সুরানপুরের আব্দুল আজিজের স্ত্রী।
জয়নব খাতুন ও আব্দুল আজিজ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি লোকাল ট্রেনে নাচোল স্টেশন থেকে ওঠেন তারা। নাচোল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আসার পথে জয়নবের হাতে থাকা স্বর্ণের একটি বালা পড়ে যায়। বিষয়টি তখন বুঝতে পারেননি স্বামী-স্ত্রীর কেউই। ট্রেন থেকে নামার পর স্টেশনে তারা খেয়াল করেন জয়নবের এক হাতে বালা থাকলেও আরেক হাতে নেই। এরপর দুজনেই ছুটে যান স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে। কিন্তু ট্রেনের প্রতিটি বগি খুঁজেও বালাটি পাননি। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন জয়নব খাতুন।
জয়নব খাতুন জানান,ছয় আনা স্বর্ণ দিয়ে বানানো ওই বালাটি। যখন খেয়াল করলাম হাতে বালা নেই, তখন যেন আকাশ থেকে পড়লাম। ট্রেনে কোলের বাচ্চা সামলাতে গিয়ে কখন বালাটি পড়ে গেছে বুঝে উঠতে পারিনি। যখন বুঝতে পারলাম তখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের প্রতিটি বগি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। বিষয়টি তখন স্টেশন মাস্টারকে জানায়। তিনিই বালাটি উদ্ধার করে দিয়েছেন। ওবায়দুল্লাহ ভাইয়ের কাছে কীভাবে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো তার ভাষা আমার নেই। তবে এমন সৎ মানুষকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।
জয়নবের স্বামী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মিয়াসাহেবপাড়ায় তার নানির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। আসার পথেই স্বর্ণের বালা হারিয়ে যাওয়ায় মন খুবই খারাপ হয়ে গেছিল। বালা ফেরত পাওয়ার ভালো লাগছে। স্টেশন মাস্টারের চেষ্টার কারণেই বালাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
স্টেশন মাস্টার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন,যাত্রীর কাছ থেকে বালা হারানোর কথা জানতে পেরে স্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখি। ফুটেজে স্টেশনের প্লাটফর্মে বয়স্ক এক ব্যক্তিকে (সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে তার নাম-পরিচয় বলেননি) বালা হাতে দেখা যায়। ছবিটি জয়নব খাতুনকে দেখালে ওই ব্যক্তিকে চিনতে পারেন তিনি। ট্রেনে জয়নবদের পাশাপাশি আসনে বসেই এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। গল্প-প্রসঙ্গে ওই ব্যক্তি জয়নবদের বলেছিলেন, পায়ের ব্যথার চিকিৎসার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে এসেছেন। এ কথা শোনার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি ওই ব্যক্তির। তখন আমরা চিন্তা করি ওই ব্যক্তি যেহেতু ট্রেনে এসেছেন চিকিৎসার জন্য, নিশ্চয়ই ট্রেনেই ফিরে যাবেন। স্টেশনের সব স্টাফদের ওই ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে তাদেরকে খেয়াল রাখতে বলি। বিকালে ফিরতি ট্রেনে নাচোল যাওয়ার জন্য ওই ব্যক্তি আবারও স্টেশনে আসেন। তখন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রেলওয়ে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় তাকে শনাক্ত করা হয় এবং বালাটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। প্রথমে ওই ব্যক্তি অস্বীকার করেন। কিন্তু পরে তাকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখালে বালা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং ফিরিয়ে দেন।
ওই সময় দায়িত্বরত রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন,জয়নব খাতুনের কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মুচলেকা নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে।