নাহিদ উজ্জামান জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন 

২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে শিবগঞ্জ পৌরসভাধীন ৭ নং ওয়ার্ডের জালমাছমারী ইসরাইল মোড়ে অবস্থিত নিজস্ব কার্যালয়ে তৈরি করা শান্তি নিবিড় পাঠাগার নামে যাত্রা শুরু করেন

নাহিদ উজ্জামান জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন 

নিজস্ব প্রতিবেদন:শেখার জন্য এসো,সেবার জন্য বেরিয়ে যাও এই স্লোগানকে সামনে রেখে নিজে শিক্ষার্থী হয়েও সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ অর্থায়নে তৈরী করা শান্তি নিবিড় পাঠাগারের মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন নাহিদ উজ্জামান নামে এক তরুণ। তিনি শিবগঞ্জ পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের জালমাছমারী ইসরাইল মোড় এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে নাহিদ উজ্জামান এবং কানসাট সোলেমান ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে শিবগঞ্জ পৌরসভাধীন ৭ নং ওয়ার্ডের জালমাছমারী ইসরাইল মোড়ে অবস্থিত নিজস্ব কার্যালয়ে তৈরি করা শান্তি নিবিড় পাঠাগার নামে যাত্রা শুরু করেন।

শান্তি নিবিড় পাঠাগারের মাধ্যমে শুধু জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে না পাশাপাশি অসহায়,দুঃস্থ ও এতিমদের লেখাপড়ার জন্য বই,খাতা কলম কিনে দেন এবং বিনা টাকায় নিজেও আরও তিনজন বেতনভুক্ত শিক্ষক দিয়ে প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান।এমনকি শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাঝে মাঝে পোশাকও কিনে দেন নাহিদ উজ্জামান।  

২০২০ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর প্রায় ৬০ জন অসহায় ও দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে ৬০ সেট বই বিতরণ করেছেন। তাছাড়া আরও হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় শতাধিক বই সেট মজুদ রয়েছে। যেগুলো শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাশে ওঠার সাথে সাথে বইয়ের সেটগুলো নিয়ে যায় এবং বছর শেষে পূর্বের বইগুলি জমা দিয়ে নতুন ক্লাশের জন্য আরও একসেট বই নিয়ে যায়।এভাবেই বই বিতরণের মাধ্যমে প্রাইমারী থেকে কলেজ এবং ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়।

সরজমিনে শান্তি নিবিড় পাঠাগারে গিয়ে দেখা গেছে শান্তি নিবিড় পাঠাগারের এক পার্শে প্রাথমিক ও হাইস্কুল পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী পাঠাগারে বসে লেখাপড়া করছে। রাধাকান্তপুর ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক সাদিকুল ইসলাম,মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক পাঠাগারের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠা নাহিদ উজ্জামানসহ চারজন শিক্ষাদান করছেন।

শান্তি নিবিড় পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক নাহিদ উজ্জামান জানান: ২০১৫ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় আমি সাতদিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। তারপর জ্ঞান ফিরলেও দুই বছর ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার সময় আমি আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলাম যদি বেঁচে উঠি তাহলে আমি অসহায় ও দু:স্থদের সেবা ও তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর ব্যবস্থা নিবো। আমার দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মাধ্যমে আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে শান্তি নিবিড় পাঠাগার নামে যাত্রা শুরু করি ও এই পাঠাগারে মোট ৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি যতদিন জীবিত আছি এবং আমার মৃত্যুর পরেও এই পাঠাগারের সকল কার্যক্রম চলমান থাকবে এই মানব সেবা করে যাবে ইনশাআল্লাহ।

জালমাছমারী গ্রামের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রাবণী খাতুন (৯) বলে:আমার পিতা সোহেল রানা অত্যন্ত গরীব হওয়ায় লেখাপড়ার খরচ ঠিকমত দিতে না পারায় নাহিদ কাকুর পাঠাগারে বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়ি। কাকু খুব ভালো করে আমাদের পড়াই।একই এলকার সিয়া খাতুন,ফাতিমা খাতুন,কফি উদ্দিন,ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পিয়াসসহ আরও অনেক শিশুই জানায় আমাদের পিতামাতা অসহায় হওয়ায় আমাদের লেখাপড়ার জন্য নাহিদ কাকু বই,খাতা কলম,এমনকি পোশাকও কিনে দেয় খুব ভাল লাগে। 

এখানেই শেষ নয় শিক্ষার্থী নাহিদ উজ্জামানের শিক্ষাসেবা মূলক কাজের আওয়াতায় আরও রয়েছে,বিভিন্ন বড় বড় মনীষীদের জীবনী,কবি সাহিত্যিকদের লেখা কবিতা সামগ্রী ও উপন্যাস,ধর্মীয় বই,কোরআন,হাদিস,অন্য ধর্মের ধর্ম গ্রন্থসহ নানা ধরনের ধর্মিণীর বই রয়েছে। যেগুলো প্রতিদিনি বিকাল ৪ টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত বেকার যুবকসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষিত লোকেরা শান্তি নিবিড় পাঠাগারে এসে বই পড়েন। 

প্রতিবন্ধী জেন্টু বলেন: নাহিদের শান্তি নিবিড় পাঠাগারে আমি প্রতিদিনই আসি এবং বই পড়ি। প্রথম প্রথম মনোনিবেশ করতে না পারলেও এখন প্রায় চার ঘন্টা বই পড়তে পারি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও শিবগঞ্জ উপজেলা ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোসা. তামান্না খাতুন বলেন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শান্তি নিবিড় পাঠাগারের সংবাদ পেয়ে পরিদর্শনে এসেছি। পাঠাগারের পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগলো। খোদ পল্লী অঞ্চলে এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই খুব প্রশংসানীয়। আমি নিজেও এ পাঠাগারের সদস্য হলাাম। এখন থেকে প্রায় পাঠাগারে এসে জ্ঞান অর্জন করবো ইনশাআল্লাহ্।

রানীহাট্টি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা তসলিম উদ্দিন বলেন: শান্তি নিবিড় পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক নাহিদ উজ্জামানের শুধু প্রশংসা নয়,তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা আমাদের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের উচিত। যাতে করে তার পাঠাগারটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয় এবং সকলের জন্য জ্ঞান অর্জনের পথ উম্মুক্ত হয়।  

চাঁপাই প্রেস প্রকাশক সাংবাদিক অনিক দেওয়ান বলেন: নাহিদ উজ্জামান যে শান্তি নিবিড় পাঠাগার তৈরি করে অসহায় দুস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিচ্ছেন সার্বিক সহযোগিতা করছেন যা আমি সত্যিই মুগ্ধ এবং নাহিদ উজ্জামানের এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।এই পাঠাগারের জন্য আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সার্বিক সহযোগিতা করবো।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আফতাব্বুজামান আল ইমরান বলেন,নাহিদ উজ্জামান যে উদ্যোগ নিয়েছে খুব ভালো একটি উদ্যোগ।শান্তি নিবিড় পাঠাগার এ পাঠাগারের যদি নিবন্ধন ভুক্ত হয় তাহলে সরকারীভাবে তাকে সহযোগিতা করা সহজ হবে।আর যদি নিবন্ধনকৃত না হলে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করা হবে। তিনি আরও বলেন: আমি অবশ্যই পাঠাগারটি পরিদর্শণ করবো এবং আরও সম্প্রসারিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।