যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাইল
শিক্ষার্থী মো. ইসমাইল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন

আলমগীর হোসেন-নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০১৯-২০ (স্নাতক) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইসমাইল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূর্ণ স্কলারশিপ পেয়েছেন তিনি।
১১ আগস্ট (সোমবার) স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাদিক হাসান শুভ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর থেকেই ইসমাইলের লক্ষ্য ছিল পড়াশোনাকে যেন তিনি চাপ হিসেবে না দেখেন, বরং উপভোগ করেন। প্রথম বর্ষ থেকেই নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ, বিষয়বস্তুর গভীর অনুধাবন ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি একাডেমিক ভিত্তি শক্ত করেন। প্রথম বর্ষেই বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং স্নাতক পর্যায়ও শেষ করেন প্রথম স্থান নিয়ে (সিজিপিএ ৩.৮৪)।
করোনার সময় ইসমাইল অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, গণিত, প্রোগ্রামিং ও SAT প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে শুরু করেন। পাশাপাশি নিজের প্রোগ্রামিং দক্ষতাও বাড়াতে থাকেন। Java, JavaScript, Python ও MySQL-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামিং ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি Software Quality Assurance বিষয়ে কোর্স করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে তিন বছর Software Development Engineer in Test (SDET) হিসেবে কাজ করেন।
শুধু প্রফেশনাল কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেননি ইসমাইল। প্রথম বর্ষ থেকেই বিভিন্ন শিক্ষকের সঙ্গে গবেষণার আগ্রহ দেখান তিনি। শুরুতে ডেটা কালেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে গবেষণা সহকারী হিসেবে যুক্ত হন। তৃতীয় বর্ষের শেষে তিনি নিজেই গবেষণাপত্র লেখা শুরু করেন। বর্তমানে তার লেখা ৬টি গবেষণাপত্র রিভিউ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় তিনি GRE পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা দেন। এরপর ২৮ ডিসেম্বর TOEFL পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর স্কোর ছিল- GRE: মোট ২৯৪ (Quantitative: ১৫৩, Verbal: ১৪১, AWA: ৩.৫), TOEFL: মোট ৮৮ (Speaking: ২৫, Writing: ২৪, Listening: ২২, Reading: ১৭)। ২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অফার লেটার পান এবং তিনটি থেকে পূর্ণ ফান্ডিংসহ পড়ার সুযোগ পান। ৮ম সেমিস্টারের চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার আগেই ইসমাইল ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই ফান্ডিংসহ অফার পায়, এবং তার সবগুলো প্রোগ্রাম ছিলো STEM (Science, Technology, Engineering and Mathematics)। যে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসমাইল ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তা হলো- ১. ইউনিভার্সিটি অফ অয়োমিং, ২. ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা, ৩. ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস, ৪. ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা, ৫. ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আরলিংটন, ৬. জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ৭. অবার্ন ইউনিভার্সিটি। এগুলোর মধ্যে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তিন ধরণের পূর্ণ ফান্ডিং পেয়েছেন—১. গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ, ২. গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ, ৩. গ্র্যাজুয়েট ফেলোশিপ। এই ফান্ডিংয়ের আওতায় তার টিউশন ফি, স্বাস্থ্য বীমা ও মাসিক স্টাইপেন্ড (খরচ) দেওয়া হবে।
ইসমাইলের এমন অর্জন শুধু নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের জন্যও একটি গর্বের বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসম্পর্কে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, ইসমাইল কঠোর পরিশ্রমী, অত্যন্ত সৎ ও ধার্মিক। তার লেগে থাকা এবং প্রত্যেকটা দিনকে কাজে লাগানো তাকে এগিয়ে নিয়েছে বহুদূর। সে রোজ ভোর বেলা উঠতো। তার সারাদিনের রুটিন থাকতো। দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী সে তার লক্ষে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়েছে। যথাযথ রুটিন মেনে কিভাবে লক্ষে পৌছানো সম্ভব, সে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। সে শুধু পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত ছিলো তা নয়; সে বন্ধুদের সময় দিয়েছে, তার স্ত্রীকেও সময় দিয়েছে। যেকেউ যেকোনো বিষয়ে সাহায্য চাইলে আন্তরিকতার সাথে সাহায্য করেছে। সবমিলিয়ে ইসমাইল একটি অনুপ্রেরণার নাম।
ইসমাইলের এই সফলতার পেছনে তার অধ্যবসায়, স্পষ্ট লক্ষ্য ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই মূল ভিত্তি ছিল বলে জানান স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাদিক হাসান শুভ। তিনি বলেন, "বিষয়টি জানতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই ইসমাইল তার লক্ষ্য অর্জনে অধ্যবসায়ী ছিল। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়াটা নি:সন্দেহের সৌভাগ্যের। স্পষ্ট লক্ষ্য ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত তাকে আজ সফলদের কাতারে নিয়ে গেছে। ইসমাইলের জন্য আমরা গর্বিত। ও শুধু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের জন্যও গর্বের। ইসমাইলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ইসমাইলের এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এই অর্জন আমাদের জন্য গর্বের। তার সাফল্য অন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। আমি আশা করি, ইসমাইল বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী তার সহপাঠীসহ অন্যান্যদেরকেও সাহায্য করবে, পরামর্শ দেবে।
এসম্পর্কে ইসমাইল বলেন, "আলহামদুলিল্লাহ। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি ইউনিভার্সিটি অফ অয়োমিং এ গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ভর্তি হয়েছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, পড়াশোনাকে উপভোগ করতে পারা এবং সময়মতো পরিকল্পনা করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ভালো একাডেমিক রেজাল্ট, গবেষণার অভিজ্ঞতা, স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্টের ভালো স্কোর ও সংশ্লিষ্ট খাতে কাজের অভিজ্ঞতাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে দেয়।