নাচোলে বাল্যবিয়ে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা

নাচোলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এবং শিশু কিশোর-কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়

নাচোলে বাল্যবিয়ে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌরসভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এবং শিশু কিশোর-কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নাচোল পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিসেফের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন এ সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, ডেঙ্গু বর্তমানে একটি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এজন্য আমাদের ও আমাদের বাড়ির ভেতর এবং আশপাশে যেন কোনো নালা বা ডাবের খোসায়, বালতিতে বা ফুলের টবে পানি জমে না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাড়ির সবাইকে মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।

বাল্যবিয়ে বিষয়ে দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, বাল্যবিয়ে রোধ করতে আমরা আজ মতবিনিময় সভা করছি; কিন্তু এতে করে সব সমাধান হবে না। এখন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজ নিজ এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে হবে। বাল্যবিয়ে সমাজে শুধু একটি মানুষের শারীরিক মানসিক অবস্থার খারাপ করে না; এটি একটি পরিবারের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হলে আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভাব হবে না। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকল প্রকার সামাজিক বাধাসমূহ রোধ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, বারো বছরের একটা মেয়ে সন্তান নেয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। এর ফলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয়। আমরা যারা এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত আছি, সকলেই শপথ নিই, আঠারো বছরের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেব না এবং আমাদের প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে এই বিষয়ে বোঝাব।

দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, ইভটিজিংও ঘর থেকেই শুরু হয়। এর কারণ হলো, একজন নারীকে যখন অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় তখন সে ফ্যামিলির সব বিষয় একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়, পরিবারের বাচ্চারা তা দেখে শিখে। তখন ছেলে সন্তানেরা মনে করে এভাবে বউকে নির্যাতন করতে হয়, মেয়েরা মনে করে বিয়ের পরে তাদের হয়তো এভাবেই নির্যাতন সহ্য করতে হয়। তখন দায়ভার আমাদের সবার ওপরই পড়ে।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীনের সভাপতিত্বে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- নাচোল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান, নাচোল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ওবাইদুর রহমান, নাচোল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মসিউর রহমান বাবু ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতুন নাঈম মুন্নি, নাচোল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা, নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদুর রহমান, নাচোল প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ বটু, নাচোল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম এনামুল হক, মুন্সি হযরত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম, নাচোল পৌরসভার প্যানেল মেয়র তারেক রহমান ও সাংবাদিক আব্দুল কাদের জিলানি।

মতবিনিময় শেষে নাচোল উপজেলা চত্বর থেকে গ্রামপুলিশদের নিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক একটি র‌্যালি বের হয়।