চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওসিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে গুমের মামলা
আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন গুম হওয়া বিএনপিকর্মী আরিফুল ইসলামের মা মোসা. শরিফন খাতুন
২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নে এক বিএনপিকর্মীকে আশার আলো কোচিং সেন্টার থেকে তুলে নিয়ে গুম করার ঘটনায় দেবীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হাফিজুর রহমানকে প্রধান ও তৎকালীন দেবীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আশরাফুল হক (৬০)-সহ ৬ জন এজাহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলী আদালতে মামলা হয়েছে।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিসট্রেট মো. আশরাফুল ইসলামের আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন গুম হওয়া বিএনপিকর্মী আরিফুল ইসলামের মা মোসা. শরিফন খাতুন। মামলাটির বক্তব্য এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিসট্রেট মো. আশরাফুল ইসলাম।
মামলায় আসামিরা হলেন- তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবের রেজা আহম্মেদ (৪৭)-সহ ৬ জন এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন। বাদীর পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম (সেন্টু)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভিকটিম আরিফুল ওই সময় আশার আলো কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। তিনি বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মামলার ১নং আসামি মো. হাফিজুর রহমানের মদদে ২নং আসামি মো. হামিদুর রহমান (রায়হান) ৩নং আসামি আশরাফুল হক ভিকটিমকে বিভিন্ন সময় গুম, খুন ও প্রাণনাশের হুমকি দিতেন। এতে বাদী ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ কর হয়, ভিকটিম আরিফুল ইসলামকে ২০১৭ সালের ১ জুলাই দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে তার নিজস্ব কোচিং সেন্টার থেকে আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে সাদা পোশাক পরিহিত এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তল, চাইনিজ কুড়াল, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় সাদা মাইক্রোযোগে ভিকটিমের কোচিং সেন্টার তথা ঘটনাস্থলে এসে কোচিং সেন্টারের চতুর্দিক ঘিরে ফেলে এবং কোচিং সেন্টারে অবস্থানরত ভিকটিম মো. আরিফুল ইসলামকে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর করে মৃত্যু, জখমের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মাইক্রোযোগে অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে যায়। আরিফুলের মাসহ পরিবারের সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা ও ডিবি অফিসে ছেলের সন্ধান জানতে চাইলে তারা জানায় আরিফুলের খবর তারা জানে না।
বাদী মোসা. শরিফুন খাতুন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি প্রাণভয়ে এতদিন মুখ খুলতে পারেননি। এখন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি মামলাটি রুজু করেছেন। এ সময় বাদী শরিফন খাতুন তার ছেলের সন্ধান চান এবং ছেলের গুমের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মামলার আইনজীবী মো. নুরুল ইসলাম (সেন্টু) জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় তুলে নিয়ে অসংখ্য মায়ের কোল খালি করেছে কিংবা সন্তানদের বাবাহারা করেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে, এজন্য গুমের মতো ঘৃণিত কাজের সহিত জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তিনি।