দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত-নাহিদ ইসলাম
মানবতাবিরোধী অপরাধী’ দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং সে সুযোগ ট্রাইব্যুনালের আছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

মানবতাবিরোধী অপরাধী’ দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং সে সুযোগ ট্রাইব্যুনালের আছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
গত বছরের জুলাই-অগাস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্যদান ও জেরা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রোববার তার জেরা শেষ হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
তিন দিনব্যাপী সাক্ষ্য ও জেরা শেষ করে নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালে তিনি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকবে এবং এ মামলা এখন পর্যন্ত ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে আসামি করে মামলা চলমান আছে।
কিন্তু আমরা এটা মনে করি যে এটা শুধু ব্যক্তির সংগঠিত অপরাধ নয়, বরং এটা রাজনৈতিক অপরাধ। ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। ট্রাইব্যুনালের সে সুযোগ আছে।
তিনি বলেন,আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব, ট্রাইব্যুনালের কাছে এখন যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এসেছে এবং শেখ হাসিনা যেহেতু দলীয় প্রধান এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জনগণকে হত্যার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। জনগণ প্রতিরোধ করে তাকে উৎখাত করেছে।
“ফলে এটা আওয়ামী লীগের সংগঠিত অপরাধ রাজনৈতিকভাবে। আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের আওতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আনা উচিত।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও নাহিদের বক্তব্যের সমর্থনে কথা বলেন।
তিনি বলেন, নাহিদ যে কথাটা বলেছেন যে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অপরাধের সম্পৃক্ততা বা প্রমাণ পাওয়া গেছে; দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া যেতে পারে।
ডেফিনিটলি আইনে সে সুযোগ আছে। এখন ট্রাইব্যুনাল বা তদন্ত সংস্থায় যদি কেউ সরাসরি অভিযোগ করে, তাহলে সুবিধা হয় সেটা তদন্ত করার জন্য। এর বাইরেও যেহেতু যে সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ আসছে, সেসব সাক্ষ্য প্রমাণের মধ্যেও দল হিসেবে সে সময়ের ক্ষমতাসীন যে দল ছিল আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৪ দল – তাদের সম্পৃক্ততার অকাট্য প্রমাণ কিন্তু আদালতে আসছে। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ আছে।
প্রসিকিউশন এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। দেখা যাক আমরা এটা নিয়ে ভাবব। এটা নিয়ে ভাবার পরে যদি যারা ভিক্টিম পরিবার তারা যদি দল হিসেবে কেউ এদের বিচারের জন্য আসে, তাহলে বিষয়টা আরও সহজ হতে পারে।এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করার পরে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে আইন আছে উল্লেখ করে তাজুল বলেন, “আমাদের আইনটা হচ্ছে তদন্ত সংস্থার কাছে যদি কোনো ফর্মে তাদের কাছে কোনো ইনফরমেশন আসে, তদন্ত সংস্থা যদি জানতে পারে যে এ ধরনের অপরাধ কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো গোষ্ঠী অথবা কোনো দল কোনো সংগঠন করেছে, তাহলেই সেটার বিরুদ্ধে তিনি তদন্ত শুরু করতে পারেন।
সুতরাং এটা সুয়োমটো করার সুযোগ আছে তদন্ত সংস্থার পক্ষে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং সারা বাংলাদেশে যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারাও সরাসরি অভিযোগ নিয়েও আসছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতেও তদন্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুধরনের পথই উন্মুক্ত আছে।কোন পথে আমরা যাব বা তদন্ত সংস্থা যাবে, সেটা যথাসময়ে হয়ত আপনারা জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে এনডিএফের ববি হাজ্জাজের একটা অভিযোগ আছে বলে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাজুল ইসলাম বলেন, “এত বেশি অভিযোগ এসেছে যে সবকিছু মিলিয়ে হয়ত সেটা ওইভাবে সামনে আসেনি।নিশ্চয়ই তদন্ত সংস্থা সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুয়োমটোর বিষয়ে তাজুল বলেন, ব্যক্তির বিচার করতে গিয়ে যদি কোনো সংগঠনের ব্যাপারে কোনো স্পেসিফিক কোনো ফাইন্ডিংস আদালতের সামনে আসে, আদালত সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারবেন।
“কিন্তু একটা সংগঠনের বিরুদ্ধে স্পেসিফিকেলি সংগঠনকে আসামি করে মামলা করার যে বিধান পরবর্তীতে আইনে সংযুক্ত হয়েছে, সেটার জন্য কিন্তু তদন্ত হতে হবে, সংগঠনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে হবে। তারপরে ফরমাল চার্জ দাখিল করতে হবে। সেটা আরেকটি বিচার প্রক্রিয়া। কিন্তু ব্যক্তির বিচারের মধ্যে কোনো সংগঠনের সম্পৃক্ততা আসতে পারে; সে সময়ে সে সংগঠনের ব্যাপারেও আদালত ফাইন্ডিংস দিতে পারেন।
তদন্ত সংস্থা চাইলে আনুষ্ঠানিক তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বিচার করা সম্ভব বলে তিনি মত দেন।
সূত্র-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম