গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষের নিরব যুদ্ধ
ভোরের আজান কিংবা মোরগডাকার শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামবাংলার মানুষের
মোঃ সজিব সরদার পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ ভোরের আজান কিংবা মোরগডাকার শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামবাংলার মানুষের। কুয়াশাভেজা সকালে মাঠের আল ধরে হেঁটে যাওয়া কৃষক, পুকুরঘাটে কলসি ভরা পানির ঝলকানি, আর উঠোনে বসে চাল বাছা মায়ের নীরব ব্যস্ততা—এসবই গ্রামজীবনের চিরচেনা দৃশ্য।
গ্রামের জীবন সহজ, কিন্তু সংগ্রামহীন নয়। ফসল ভালো হলে হাসি ফোটে কৃষকের মুখে, আর প্রকৃতি বিরূপ হলে সেই হাসিই বদলে যায় দুশ্চিন্তায়। তবুও তারা হাল ছাড়ে না। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাটির সঙ্গে যুদ্ধ করেই বাঁচে গ্রামবাংলার মানুষ।

গ্রামের শিশুরা কাদা মাখা পথে হেঁটে স্কুলে যায়। বইখাতা ভিজে গেলেও স্বপ্ন ভেজে না। কেউ হতে চায় শিক্ষক, কেউ ডাক্তার—আকাশছোঁয়া সেই স্বপ্নগুলোই তাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা।
শহরের মতো সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও গ্রামে আছে মানবিক সম্পর্কের উষ্ণতা। বিপদে প্রতিবেশী ছুটে আসে, আনন্দে ভাগাভাগি হয় এক থালা পিঠা।
উৎসব এলে পুরো গ্রাম যেন এক পরিবারের মতো মিলেমিশে যায়। এই গ্রামবাংলাই দেশের প্রাণ। এখানকার সাধারণ মানুষের শ্রমে ভর করেই দাঁড়িয়ে আছে জাতির ভিত। নীরবে, নিরবে তারা গড়ে চলে আগামী দিনের বাংলাদেশ।
শহরজীবন কংক্রিটের ভিড়ে সাধারণ মানুষের নিরব যুদ্ধ—শহরের সকাল শুরু হয় অ্যালার্মের শব্দে। ব্যস্ত রাস্তায় বাসের জন্য দৌড়, যানজটে আটকে থাকা দীর্ঘশ্বাস, আর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই—এই হলো শহরের সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের গল্প।
কেউ রিকশা চালায়, কেউ অফিসে কাজ করে, কেউ দোকানের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে দিন পার করে। হাজার মানুষের ভিড়ে থেকেও শহরের মানুষ অনেক সময় একা।
তবুও জীবন থেমে থাকে না। পরিবারের দায় আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন তারা নামেন সংগ্রামে।
বস্তির ছোট ঘরে কিংবা ভাড়াবাড়ির সংকীর্ণ ফ্ল্যাটে গড়ে ওঠে অসংখ্য জীবনের গল্প। অল্প আয়েও সন্তানকে ভালো রাখার চেষ্টা, শিক্ষা দিতে মরিয়া বাবা-মা—এই সাধারণ মানুষই শহরের অদৃশ্য নায়ক।
শহরে আনন্দ আসে ছোট ছোট মুহূর্তে। কাজ শেষে এক কাপ চা, সন্তানের হাসি, কিংবা মাসের শেষে বেতন হাতে পাওয়ার স্বস্তি—এই সামান্যতেই খুঁজে নেয় তারা সুখ।
কংক্রিটের দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই সাধারণ জীবনই শহরকে সচল রাখে। তাদের শ্রম ছাড়া শহর অচল, অথচ তারাই সবচেয়ে কম আলোচনায় আসে।




