পাওনা টাকা পরিশোধের প্রলোভনে ডেকে এবার কৃষক ও ব্যাবসায়ীদের পেটালেন চালকল মালিক
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ১০ ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ
এবিএস রতন নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ১০ ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রি (প্রা.) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের মালিক ওসমান গণি ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী।
রবিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। উপজেলার আখেড়াবাড়ি এলাকায় ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রি (প্রা.) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের চালকল কারখানায় গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ওসমান গণি ও তাঁর লোকজন ওই ১০ ব্যবসায়ীকে মারধর করে এবং ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এ ঘটনায় চালকল মালিক ওসমান গণি ও তাঁর ছেলে রুহুল আমিন, ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলের ব্যবস্থাপক আবু নাছিম মো. মশিউর রহমানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১২০ জনের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেছেন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স নামের ধান আড়তের স্বত্তাধিকারী ছামিউল আলম।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের চালকল কারখানায় পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য কয়েকজন ধান আড়তদার ও চালকল মালিক এসেছিলেন। সেদিন তাঁদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে পাওনাদাররা আমাদের কারখানায় ভাঙচুর চালায় ও কর্মচারীদের মারধর করে। আমাদের লোকজন কারও গায়ে হাত দেয়নি। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও সংবাদ সম্মেলন করে মর্যাদাহানির চেষ্টা করছে কয়েকজন ব্যবসায়ী।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার মাতাজিহাট বাজারের ধান আড়তদার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ছামিউল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গণি দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কাছ থেকে বাকিতে ধান কিনে পাওনা টাকা না দিয়ে পালিয়ে যান। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কৃষকের তাঁর কাছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। পাওনা টাকা উদ্ধার ও অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর শাস্তির দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা। ওসমান গণি পাওনা টাকা না দেওয়ার জন্য প্রতারণামূলক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন শেষে গত বৃহস্পতিবার ছামিউল আলমসহ কয়েকজন পাওনাদারকে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য তাঁর মিলে ডেকে নেন। ওসমান গণির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাওনাদাররা উপজেলার আখেড়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিল কারখানায় গেলে ওসমান গণির নির্দেশে তাঁর ছেলে রুহুল আমিন ও রাইস মিলের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমানের নিতৃত্বে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে ধান-চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমান, আনোয়ার হাসেন, আব্দুস সাত্তার, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মামুনুজ্জামান জিন্নাহ, তৌহিদুল ইসলাম, ইমরান হোসাইন রাজু, নূরনবী, মোনায়েম হোসেন ও ছামিউল আলম আহত হন। এছাড়া পাওনা টাকা নিতে আসা ওই সব ব্যবসায়ীদের ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
ছামিউল আলম বলেন, ‘সেদিন আমরা ২০-২৫ ব্যবসায়ী পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য ওসমান গণির চালকল কারখানায় গিয়েছিল। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাঁরা ১০০ জনের বেশি ছিল। আমরা মিলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অতর্কিত হামলা করা হয়। হামলায় আহতদের মধ্যে অধিকাংশই নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুত্বর আহতদের মধ্যে আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও আব্দুস সাত্তার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের জীবন সংকটাপন্ন।’
হামলার ঘটনার পর চার দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ মূল আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো প্রতারক চালকল মালিক ওসমান গণি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। ওসমান গণি ও তাঁর সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মেসার্স বেলাল ট্রেডার্স ধান আড়তের মালিক আহসান হাবিব, মেসার্স রিফাত ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আবু হেনা মোস্তফা, মেসার্স মাহবুব রাইস মিলের মালিক মোনায়েম হোসেন, মেসার্স আল-আমিন ট্রের্ডাসের স্বত্ত্বাধিকারী তৌহিদুল ইসলাম, মেসার্স জেমি ট্রেডার্সের স্বাত্ত্বাধিকারী মামুনুজ্জামান জিন্নাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওসমান গণি ও তাঁর ছেলে রুহুল আমিনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিল কারখানায় মারামারির ঘটনায় উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করেছেন। পাওনাদারদের করা মামলায় হাফিজুর রহমান নামে রাইস মিলের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছেন। মামলার অভিযুক্ত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।