চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুকুলের ক্ষতি হওয়ায় আমের গুটি বেড়িয়েছে তুলনামূলক কম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান গুলোতে চলতি বছরে প্রায় শতভাগ আমের মুকুল এসেছিল। আম চাষিরাও বাম্পার ফলন নিয়ে আশাবাদি ছিলেন।

বদিউজ্জামান রাজাবাবু স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান গুলোতে চলতি বছরে প্রায় শতভাগ আমের মুকুল এসেছিল। আম চাষিরাও বাম্পার ফলন নিয়ে আশাবাদি ছিলেন। কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারণে এবার আশানুরুপ আমের গুটির দেখা পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিকভাবে এবার বেশি ফলনের বছর হলেও আমের গুটি এসেছে খুবই কম। ফলে এবার কাঙ্ক্ষিত আমের ফলন নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। তারপরেও স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ধারণা-চলতি মৌসুমে জেলায় ৭০-৭৫ শতাংশ গাছে টিকতে পারে আম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুধায়ী, গত বছরের তুলনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ১০০ হেক্টর বাগান কমে যাওয়ায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হচ্ছে। পাঁচ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হচ্ছে শিবগঞ্জে। এখানে ২০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। এছাড়া ভোলাহাট উপজেলাতে ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। যা উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম জমিতে আম চাষ। চলতি বছর প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩ মেট্রিক টন হিসাব করে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৯০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।বাগান মালিকরা জানান, গতবারের তুলনায় এবার ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানের প্রায় সব গাছে আমের মুকুল হয়েছিল। ইতিমধ্যে মুকুল ফুটে গাছের ডালে ঝুলছে গুটি। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে এবার সব গাছে মুকুল ফোটেনি। যদিও মুকুল ফুটে গুটি বেরিয়েছে সেখান থেকে অনেকটা ঝরে পড়ছে। সামনের দিনে খরা বাড়লে আরও ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়া ঝড়-ঝাপটা তো আছেই। সবমিলিয়ে মুকুলে আশাবাদি হওয়া গেলেও আমের গুটিতে আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় চিন্তিত তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগান মালিক আঃ লতিব বলেন, 'এবার বাগানের প্রতিটি গাছে মুকুল এসেছিল। মুকুল দেখে আমরা অনেক আশাবাদি হয়েছিলাম। প্রাকৃতিকভাবে এবার বেশি ফলনের বছর হওয়ার পরেও গাছে মুকুল এসেছে কম আবহাওয়ার কারণে মুকুল ফুটে' গুটি বের হয়েছে তুলনামূলক কম।
তিনি আরও বলেন,ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। কিন্তু সে সময় কুয়াশার কারণে অনেক গাছে মুকুল নষ্ট হয়েছে। যে সময় আমের জন্য বৃষ্টি দরকার ছিল,তা হয়নি। খরায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে। খিরাশাপাত গাছে আশানুরুপ গুটি থাকলেও আশ্বিনা, ফজলি,ল্যাংড়া-বোম্বাই আমের গাছে প্রায় ৬০ শতাংশ আমের গুটি ঝরে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, 'এবার অন ইয়ার হলেও যতটা আম হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। মুকুলের সময় হালকা বৃষ্টি, রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, দিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বেড়েছে পরিচর্যা খরচ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোয় ঝুলছে আমের গুটি। আবহওয়ার কারণে গুটি ঝরে পড়ায় বাগানে বেশি পরিচর্যা করতে হচ্ছে। সার-বিষের পাশাপাশি গুটি ঝরা রোধ করতে সেচ দিতে হচ্ছে বারবার। তারপরেও রয়েছে শ্রমিক সংকট। গত বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ- এমনটাই বলছেন বাগান মালিকরা।
বরেন্দ্র এলাকার আমচাষি মোরশালিন বলেন, 'মুকুল আসা থেকে শুরু করে গুটি আসা পর্যন্ত সাতবার কীটনাশক স্প্রে করেছি। বাজারে আম আসা পর্যন্ত আরও চার থেকে পাঁচবার স্প্রে করতে হবে। গতবারের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে দু-তিন গুণ। গতবারের থেকে বাড়তি মজুরী দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।
আম চাষি তরিকুল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে ২৫-২৮ শতাংশ। কীটনাশকের দামও চড়া। এগুলোর * দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া শ্রমিকের মজুরি গতবার ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। কিন্তু এবার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।'
এসব বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন 'কোনো কোম্পানি যদি সার-বিষের দাম বাড়ায় তা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে। সারের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন,খরার কারণে যারা সেচ দেয়নি তাদের বাগানে কিছু গুটি ঝরেছে। তবে যারা সেচ দিয়েছে তাদের বাগানে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে জেলায় এবার ৭০-৭৫ শতাংশ গাছে আম উৎপাদন হতে পারে।