নওগাঁয় বেপরোয়া ডিবি এসআই মামুন-মুকুল''কয়েক মাসে কোটি টাকা বানিজ্য

নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত এসআই মামুন হোসেন ও এএসআই মুকুল হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক ও জাল টাকা ব্যবসায়ীদের আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় এবং জব্দকৃত মাদক কম দেখিয়ে আত্মসাতসহ বেপরোয়া কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে।

নওগাঁয় বেপরোয়া ডিবি এসআই মামুন-মুকুল''কয়েক মাসে কোটি টাকা বানিজ্য

এ.বি.এস রতন স্টাফ রিপোর্টার: নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত এসআই মামুন হোসেন ও এএসআই মুকুল হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক ও জাল টাকা ব্যবসায়ীদের আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় এবং জব্দকৃত মাদক কম দেখিয়ে আত্মসাতসহ বেপরোয়া কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক মাসের একাধিক ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকার লেনদেন ও অনিয়মের তথ্য সামনে এসেছে।

এসআই মামুনের দীর্ঘদিন ধরে বদলি অর্ডার কার্যকর থাকলেও তিনি এখনও ডিবি অফিসেই দায়িত্ব পালন করছেন। এসব ঘটনায় উচ্চতর তদন্তের দাবি সচেতন মহলের।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১২ জুন নওগাঁ শহরের গোস্তহাটি মোড় এলাকা থেকে রানা কারী নামে একজনকে জাল টাকাসহ আটক করে ডিবি সদস্যরা। রানার তথ্য অনুসারে সুলতান এবং পরে সান্তাহার রিয়্যাক্ট কলোনীর জব্বার হোসেনকে আটক করা হয়। জব্বারের বাসায় তল্লাশির সময় তার স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ডিবি সদস্যরা ২ লাখ টাকা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সুলতানকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে ৮৫ হাজার এবং পরে ‘রিমান্ডের ভয়’ দেখিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। রানা জামিনে বের হয়ে আবার জাল টাকা ব্যবসায় যুক্ত হলে পুনরায় তাকে এবং সহযোগী নিজামকে আটক করা হয়।

সুলতান অভিযোগ করে বলেন, আমার কাছে কোনো জাল টাকা ছিল না। রানার মাধ্যমে আমাকে ডাকা হয় জব্বারকে ধরিয়ে দেওয়ার সহযোগিতা করার জন্য। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। রানার নিকট হতে আরও বেশী টাকা নিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে তাকে নামমাত্র মামলা দিয়েছে। রানা ও ডিবির দুই অফিসার আমার জীবনটা ধংস করেছে।

গত সেপ্টেম্বর নিয়ামতপুরের ছাতরা এলাকা থেকে আমিনুর ইসলাম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৩০০ পিস ট্যাপেন্টাডলসহ আটক করা হয়। পরে ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ১০০ পিস দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়। আটকের সময় থাকা আমিনুরের মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকায় না থাকলেও ডিবি অফিসে আটকে রাখা হয়। মোটরসাইকেল ফেরত দিতে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারায় আইন বহির্ভূত ভাবে ডিবি অফিসে আটকে রাখা হয়েছে।

আমিনুর বলেন, ১৬ হাজার টাকা নিয়েছি মামলায় মাদকের পরিমান কমিয়ে দেওয়ার জন্য। এখন মোটরসাইকেলের জন্য কিছু টাকা চেয়েছে। টাকা না থাকায় মোটরসাইকেলটি আনতে পারিনি।

গত ২৮ মার্চ মহাদেবপুরে মেরিনা আকতারের বাড়ির সামনে থেকে ১ হাজার ইয়াবা, ৫০ গ্রাম হেরোইন ও একটি সিএনজি অটোরিকশাসহ চারজনকে আটক করা হয়। অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সিএনজি ও আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলায় দেখানো হয় মাত্র ১০ গ্রাম হেরোইন এবং এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা। এ ঘটনায় স্থানীয়দের দাবি অবশিষ্ট মাদক পরে ডিবির সোর্সের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

মেরিনা আকতার বলেন, আটককৃতরা মূলত আমার বাড়িতেই বেড়াতে আসার কথা ছিল কিন্তু বাড়ির গেট হতেই সিএনজি গাড়িসহ তাদের আটক করা হয়। তাদের সঙ্গে কি পরিমান মাদক ছিল বলতে পারব না। তবে এবিষয়ে মেরিনার এক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান মেরিনায় মাদক ক্রয় করার কথা বলে তাদের নিয়ে এসে ডিবি দিয়ে ধরিয়ে দেয়। আটকের সময় তাদের নিকট ১ হাজার পিচ ইয়ারা ও ৫০ হিরোইন ছিল শুনেছি।

গত ৭ এপ্রিল নুনিয়া পট্টি এলাকায় দুই মাদকসেবীকে আটকের পর জাকিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১০ পুরিয়া হেরোইন, ১০ ইয়াবা ও ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, তাকে মামলায় না জড়ানোর শর্তে ১ লাখ টাকা নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার নাম মামলায় যুক্ত করা হয়।

জাকিয়া বলেন, কিছু না পেয়েও আমার টাকা নিয়ে গেছে। পরে মামলা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ১ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু তারপরও মামলায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে।

গত ১৯ এপ্রিল মহাদেবপুরের খোর্দ্দনারায়নপুরে একটি মোটরসাইকেল থামিয়ে কয়েক হাজার পিস ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করা হয়। অভিযোগ, পলাতক অভিযুক্তের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা রফাদফা করে মাদকের পরিমাণ কমিয়ে ৭৫০ পিস দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বদলগাছী সদরে ফেনসিডিলসহ মিঠু, এরশাদ ও মিল্টন নামে

তিনজনকে আটক করে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এএসআই মুকুলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরই এসআই মামুন-মুকুল টিম তৈরী করে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

গত কযেক মাসে পরপর ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে রফাদফা ও মাদকের পরিমান কমিয়ে আত্নসাতের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।  

বিষয়গুলো নিয়ে কথা হলে নওগাঁ ডিবি পুলিশের এএসআই মুকুল হোসেন বলেন, এসব আমি বলতে পারবোনা। মামলাগুলোর বাদী মামুন স্যার তার সাথে কথা বলেন। আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবোনা।

এসআই মামুন হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। যাদের আটক করেছি তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে। মাদক কম দেখানো হয়নি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসি ( বর্তমান পোরশা থানার ওসি ) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় জিডি করে রাখা হয়েছিল।তবে ওসিকে বিষয়টি অবগত করার পর মোটরসাইকেলটি দ্রুতই ডিবি অফিসের গ্যারেজ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমাদের বাহিনীর নিজস্ব কিছু আইনকানুন আছে সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে বিধি মোতাবেক তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে।