চাকরিতে পুনর্বহাল ও কারাবন্দী বিডিআর সদস্যদের মুক্তির দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন
পিলখানা হত্যাকান্ডে সুষ্ঠু তদন্ত ও চাকরিচ্যুত সকল বিডিআর বর্তমান বিজিবি সদস্যদের চাকরিতে পূর্ণবহাল ও কারাবন্দী বিডিার সদস্যদের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় মানববন্ধন
এ বি এস রতন নওগাঁ প্রতিনিধি:পিলখানা হত্যাকান্ডে সুষ্ঠু তদন্ত ও চাকরিচ্যুত সকল বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের চাকরিতে পূর্ণবহাল ও কারাবন্দী বিডিার সদস্যদের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ ও ক্ষতিগ্রস্থ বিডিআর সদস্য এবং তাদের পরিবারবর্গ নওগাঁ জেলার’ ব্যানারে এ কর্মসূচী পালিত হয়।
এসময় বিডিআর চাকরিচ্যুত নায়েব সুবেদার আব্দুস সামাদ সাহান’র সভাপতিত্বে চাকরিচ্যুত সিপাহী দেলোয়ার হোসেন, সিপাহী সোহরাব হোসেন, সিপাহী জিয়াউল হক, আটক সিপাহী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রেশমী বানু, পিলখানায় নিহত নায়েক সুবেদার মোজাম্মেল হকের ছেলে মোহায়মেনুল হক সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।মানববন্ধনে দুই শতাধিক চাকরিচ্যুত ও কারাবন্দী বিডিআর সদস্য এবং তাদের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন।
বক্তারা বলেন- ২০০৯ সালে ২৫-২৬ শে ফেব্রুয়ারি পরিকল্পিত পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যগণ তৎকালিন ফ্যাসিস্ট সরকার সেনাবাহিনীর সামর্থ ক্ষুন্ন করতে বিডিআরকে ধ্বংস করার জন্য, প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে এবং ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করতে নীল নকশার অংশ হিসেবে সুপরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র পূর্বক পিলখানা হত্যাকান্ড সংগঠিত করে। ওই হত্যাকান্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ ৭৪ জন শাহাদাত বরণ করেন। ঘটনা পরিবর্তী ফ্যাসিস্ট সরকার প্রহসনের বিচারের নামে আলামত ধ্বংস ও নিরীহ ৫৪ জন বিডিআর সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যা করেন।ঘটনার পর থেকে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। চাকুরিচ্যুতদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা সহ চাকরিতে পুর্নবহালের দাবী জানানো হয়।
বক্তারা আরো বলেন-পিলখানা ঢাকা সহ সারাদেশে বিডিআর ব্যাটালিয়ন ও সেক্টরে গঠিত সকল প্রহসনের বিশেষ আদালত কে নির্বাহী আদেশে বাতিল, হত্যাকান্ডের ঘটনার মোটিভ উদ্ধার ও সনাক্তকরণে তদন্ত কমিটি গঠন, ২৫ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে পিলখানা ট্রাজেটি দিবস ঘোষনা, হত্যাকন্ডের ঘটনা পরবর্তী তদন্ত/ জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে যে সকল নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতনপূর্বক হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা প্রকাশ ও মৃত সকল পদবীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ সহ পূর্নবাসন, নিরাপরাধ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতন পূর্বক হত্যা করা হয়েছে তাদের কে সনাক্ত পূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা সহ করতে হবে।
এছাড়া বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষকারী বিডিআর সদস্যগণ যারা প্রসনের বিস্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ কারা অন্তরীন আছে, তাদেরকে অনতি বিলম্বে জামিন ও মামলা হতে অব্যাহতি পূর্বক মুক্ত করার দাবী জানানো হয়।
হাবিলদার সুলতান মাহমুদের মেয়ে সানজিদা আক্তার বলেন- আমার বাবা ৪১ ব্যাটেলিয়নের অধীনে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তে কর্মরত ছিলেন।তিনি ২৬ বছর চাকরি করেছেন। কিন্তু পিলখানার ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজত খাটতে হয়েছে।এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীরা অনেক কটু কথা বলে আমাদের সম্মানহানী হচ্ছে। বাবার চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানাই।
সাবেক বিডিআর সিপাহী লুৎফার রহমান অভিযোগ করে বলেন- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিকল্পনা করে পিলখানা থেকে হত্যাকান্ড বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েছে। এরপর অন্যায়ভাবে আামাদের আটক করে ১৭টি ধারা দিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানায় মামলা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে। সেখানে ১৪ মাস কারাভোগ করা হয়। স্বাক্ষী প্রমাণ না থাকায় ওই মামলাটি প্রতাহার হয় এবং ওইদিনই বিডিআর আমাদের আবারও আটক করে। এরপর ক্যান্টমেন্টে নিজেস্ব আদালতে ইচ্ছামতো আমাদের সাজা দেয়। সেখানে আমরা কোন আইনজীবীর সহযোগীতা নিতে পারিনি। এরপর ৭ বছর হাজতবাস করে চাকরিচ্যুত হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
সাবেক বিডিআর সিপাহী রাজ্জাক আলী নামে এক ভুক্তভোগী বলেন- ওই সময়ে যশোর জেলার একটি ইন্টিলিজেন্স শাখায় কর্মরত ছিলাম। পিলখানার ঘটনা আমার জানা ছিল না। আমার চাকরির বয়স হয়েছিল ২৪ বছর ৩ মাস। আর ৯মাস পরই চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে কারাগারো পাঠানো হয়েছিল।আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলাম পিলখানা হত্যাকান্ডের সাথে আমি জড়িত না। কিন্তু তারপরও আমাকে ৯মাস কারাভোগ করার পর চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি এবং নিরপরাধদের মুক্ত করে পূর্ণবহাল করার দাবী জানান তিনি।