চাঁপাইনবাবগঞ্জে বই উৎসব অনুষ্ঠিত

তোমাদেরই কাঁধে সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্ব বই উৎসবে গালিভ খাঁন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বই উৎসব অনুষ্ঠিত

সারাদেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদরাসাগুলোয় বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই। আর নতুন বই হাতে পেয়ে উৎসবে মেতে উঠেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার প্রথমে জেলাশহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পর্যায়ক্রমে নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হারিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

তিন বিদ্যালয়েই উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। তিনি বলেন, বছরের প্রথম দিনে বই শিক্ষাকে শানিত করবে, শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষার্থীরা মেধা ও মননে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এ দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। তারা একদিন বাংলাদেশকে উন্নত বিশে^র কাতারে দাঁড় করাবে। এজন্য মাদক. সন্ত্রাস, বাল্যবিয়েসহ সকল অপকর্ম থেকে তোমাদের দূরে থাকতে হবে। তোমাদের মানুষের মতো মানুষ হতে হবে, সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে তোমাদের সোনার মানুষ হতে হবে। জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করতে হবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশকে ভালোবাসতে হবে। তোমাদের মনে রাখতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশকে গড়ার মহান দায়িত্ব তোমাদেরই কাঁধে।

নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বই উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আনিছুর রহমান, জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রশিদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছমিনা খাতুন। মডেলের উৎসবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেছের আলী। হরিমোহনের উৎসবে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ড. রুহুল ইসলাম এবং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক মুহা. মুনসুর আলী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জেছের আলী জানান, জেলার সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার ৭০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ লাখ ৭৫ হাজার জন শিক্ষার্থীর জন্য চাহিদা ছিল ১০ লাখ ৪২ হাজার খানা পাঠ্যপুস্তক। শতভাগই পাওয়া গেছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুর রশিদ জানান, মাধ্যমিকে (বাংলা ভার্সন) ১ লাখ ২১ হাজার ৮০ শিক্ষার্থীর জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৬ খানা, পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৭ হাজার ৫২৭ খানা। গড়ে ৮৫ ভাগ বই পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে এসএসসি ভোকেশনালের সকল বই এখনো পাওয়া যায়নি। এই বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২ হাজার ৪৫০ জন। তবে ভোকেশনাল ট্রেডের ৪৬ ভাগ বই পাওয়া গেছে। এই ট্রেডে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৫২০ জন। বইয়ের বরাদ্দ ১২ হাজার ২৮২ খানা, পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৭১২ খানা বই।

এদিকে জেলায় এবতেদায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৬৫ জন। বই বরাদ্দ ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ খানা। শতভাগ বই পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে দাখিলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪১ হাজার ৩৭৫ জন। বই বরাদ্দ আছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫২০ খানা। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৯০ খানা। দাখিলে বই প্রাপ্তির হার ৬৯ শতাংশ। তবে দাখিল ভোকেশনালে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৭০ জন। তাদের জন্য বই বরাদ্দ ৯১০ খানা, কিন্তু এখনো কোনো বই পাওয়া যায়নি।

তবে কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি সব বই চলে আসবে বলে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রশিদ জানান।

শিবগঞ্জ : এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিস বই বিতরণের আয়োজন করে। সেলিমাবাদ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণের মধ্য দিয়ে এই বই উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএফএম আবু সুফিয়ান।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মুরশিদুল আলম।

আলোর পাঠশালা : বছরের প্রথম দিনটা শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের দিন। এ দিনে তারা নতুন বই হাতে নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। তবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের সঙ্গে বাড়তি আনন্দ যুগিয়েছে দুপুরের খাবার।

এ বিদ্যালয়ে সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বই উৎসব শুরু হয়। বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় নতুন বই। বই হাতে পেয়েই উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা বাড়ি না গিয়ে দলবেধে বিদ্যালয়ের মাঠ, বসার বেঞ্চ, বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণসহ বাইরে জমির আলপথ, উঁচু পতিত জমির ঘাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে থাকে। পাতা উল্টিয়ে দেখতে ও পড়তে থাকা নতুন পড়া। বইয়ের ছড়া বলতে শোনা যায় অনেককেও। এগুলো চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। এরপর সকলে নানান সবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ির সঙ্গে ডিম নিয়ে খেতে বসে। এ বিদ্যালয়ে পাঠাগার নির্মাণে সহায়তা দেয়া অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এ খাদ্য সহায়তা দেন।

বই বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাবুডাইং আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, গ্রাম্য মোড়ল কার্তিক কোল টুডু, মাধব কোল সরেন, চানু হাসদা, লগেন সাইচুরি, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।

বই বিতরণে আসা অভিভাবক, গ্রামের মোড়ল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন, এরপর থেকে সাধ্যমত শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করার। এজন্য নতুন বছর থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি সাপ্তাহিক মুষ্টির চাল তোলা হবে। এছাড়া শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেও নেয়া হবে আর্থিক সহযোগিতা।