বিজিবি সদস্যের মরদেহ শিবগঞ্জে নিজ গ্রামে স্বজনদের আহাজারি

নিহতের মা রুমালি বেগম তার সন্তানের পরিবারের জন্য একটি আবাসস্থল এবং রেখে যাওয়া ২ সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার দাবি করেন সরকারের প্রতি।

বিজিবি সদস্যের মরদেহ শিবগঞ্জে নিজ গ্রামে স্বজনদের আহাজারি

যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য রইসউদ্দীনের মরদেহ নিজ গ্রাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাহাপাড়া শ্যামপুরে পৌঁছার পর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার বিকেল ৪টার দিকে যশোর থেকে বিজিবির একটি দল হেলিকপ্টারযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে রইসউদ্দীনের মরদেহ নিয়ে অবতরণ করে। পরে বিজিবি মরদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহতের গ্রামের বাড়ি উপজেলার সাহাপাড়া শ্যামপুরে নিয়ে যায়।

এ সময় বিজিবির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৩ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন এবং রহনপুর ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) উপঅধিনায়ক মেজর ইমরুল কায়েস, সহকারী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কফিনের ওপর মুড়িয়ে দেয়া ছিল বিজিবির পতাকা।

পৈত্রিক ভিটায় মরদেহ পৌঁছার পর স্বামীর মরদেহ নিয়ে বিলাপ করছিলেন স্ত্রী নাসরিন বেগম। আর দাদা ও নানার কোলে ২ বছর বয়সী শিশু রাইশা খাতুন ও ৪ মাসের হাসান আলী এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে দেখছিল। কি হয়েছে কেন সব কাঁদছে তা অনুধাবন করতে না পারলেও কিছু একটা যে হয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই দুই অবোধ শিশুর। কফিনের মধ্যে শুইয়ে রাখা তাদের পিতার মরদেহ। বাচ্চা দুটি ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর বুকফাটা আর্তনাদ নিহত রইস উদ্দীনের মা রুমালি বেগমের।

মরদেহ বাড়িতে আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা মৃত রইসউদ্দীনকে একনজর দেখতে ভিড় করেন। পরিবার, স্বজন আর গ্রামবাসীর কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস।

বুধবার মরদেহ আসার পর শিবগঞ্জ উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের শ্যামপুরে রইসউদ্দীনের বাড়ির সামনের চিত্রটি ছিল এমনই। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শ্যামপুর নুরেস মোড় এলাকায় আল আরাবিয়্যাহ মাদ্রাসায় জানাজা শেষে শ্যামপুর ভবানীপুর কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এর আগে যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইসউদ্দীনের মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় শার্শার শিকারপুর সীমান্তের মুক্তিযোদ্ধা খামারপাড়া ও ভারতের গাঙ্গুলিয়া সীমান্তের ২৮ নাম্বার মেইন পিলার দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর ৪৯ বিজিবির সিও জামিল আহম্মেদ ও ভারতীয় বিএসএফের ১০৭ ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

এদিকে রইসউদ্দীনের গ্রামবাসী জানায়, কৃষক কামরুজ্জামানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ৩ ছেলের মধ্যে সব ছোট রইসউদ্দীন ছিলেন এলাকার প্রিয় মানুষ। বড় ছেলে সেনাবাহিনীতে এবং মেজ ছেলে বিজিবিতে কর্মরত। নিহত রইসউদ্দীন নিজের সংসারের জন্য কিছু করতে পারেননি। নেই তার বাড়িঘর।

নিহতের মা রুমালি বেগম তার সন্তানের পরিবারের জন্য একটি আবাসস্থল এবং রেখে যাওয়া ২ সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার দাবি করেন সরকারের প্রতি।

এর আগে গত সোমবার ভোরে যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র গুলিতে বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইসউদ্দীন নিহত হন।