নওগাঁয় সরকারি রাস্তার পাশে ভূমিহীন বৃদ্ধকে উচ্ছেদের অভিযোগ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধইপুর ইউনিয়নে সরকারি রাস্তার পাশে প্রায় ৩০ বছর যাবত কুঁড়েঘর করে বসবাসকারী লাইলী বেওয়া নামের এক অসহায় বৃদ্ধাকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে উচ্ছেদের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।

নওগাঁয় সরকারি রাস্তার পাশে ভূমিহীন বৃদ্ধকে উচ্ছেদের অভিযোগ

এ.বি.এস রতন রিপোর্টার : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধইপুর ইউনিয়নে সরকারি রাস্তার পাশে প্রায় ৩০ বছর যাবত কুঁড়েঘর করে বসবাসকারী লাইলী বেওয়া নামের এক অসহায় বৃদ্ধাকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে উচ্ছেদের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুর গ্রামে। বিগত ৩০ বছর যাবত রাস্তার পাশে এক অসহায় বৃদ্ধা ভূমিহীন লাইলী বেওয়া বসবাস করে আসতেছিল। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে তার ঘর ভেঙে পড়লে তার নতুন করে ঘরনির্মাণ করার অর্থ না থাকায়,তার ছেলের বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে কিছুদিন পরে সেই পূর্বের জায়গায় ঘর তৈরি করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন ভূমিহীন লাইলী বেওয়া।

অসহায় বৃদ্ধা ভূমিহীন লাইলী বেওয়া বলেন, আমি গত ১৪.০৯.২৫ তারিখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, বিগত ৩০ বছর যাবত সরকারি এই রাস্তার পাশে বসবাস করে আসতেছি। এই জায়গা অনেক নিচু ছিল আমি প্রায় ৪০ হাজার টাকার মাটি কেটে ঘর তৈরি করে ছিলাম। ঝড় বৃষ্টির কারণে আমার ঘর নষ্ট হলে ছেলের বাড়ির বারান্দায় থাকি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর গ্রামবাসীর সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে সেই পূর্বের জায়গায় রাস্তার পাশে ঘর করতে গেলে আব্দুর রাজ্জাক সহ তার সাঙ্গপাঙ্গ বাধা সৃষ্টি করে এবং অধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করে। পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম পল্টনকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে জমি মাপ করে ভাগ করে দিয়েছে। রাস্তাটি আছে দৈর্ঘ্য ৭২ ফিট, প্রস্থে আছে একদিকে ৫৫ ফিট এবং অন্য মাথা ৩৬ ফিট। আমার একটি ঘরের জন্য কোন পথচারীর সমস্যা হবে না। আমি এক বৃদ্ধ অসহায় ভূমিহীন নারী আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

আব্দুর রাজ্জাক বলে,এই রাস্তার পাশে আমি ও লাইলীর ছেলে মোখলেসুর রহমান মিলে জায়গাটি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেছি, আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জায়গা নেই বলে অভিযোগ দিয়েছি। চেয়ারম্যানের উদ্যোগে আমিন এনে সরকারি এই জায়গাটি মাফ করে দুই জনকে ভাগ করে দিয়েছে, মোখলেসুরের দিকে হাফ শতাংশ জমি বেশি দিয়েছে যেন তার মায়ের ঘর করা যায়। 

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৩০-৪০ বছর যাবত লাইলী এখানে একটি কুঁড়েঘর নির্মাণ করে জীবনযাপন করে আসছিল। কিছুদিন আগে তার ঘর নষ্ট হয়ে পড়লে ছেলের বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নেয়। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে পূর্বের সেই জায়গায় আবারো কুঁড়েঘর নির্মাণ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হয়। অসহায় বৃদ্ধ ভূমিহীন লাইলীকে এখান থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্জাক সহ তার কিছু লোকজন। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান মোটা অংকের টাকা নিয়ে কুঁড়েঘর নির্মাণে দণ্ড সৃষ্টি করেন। আমরা গ্রামবাসী এই বৃদ্ধ ভূমিহীন লাইলীর পূর্বের জায়গায় যেন কুঁড়েঘর নির্মাণ করে তার শেষ বয়সটা কাটাতে পারে এমন সহযোগিতা চাই প্রশাসনের কাছে।

একই গ্রামের বাসিন্দা জিন্না বেগম বলে, আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খেয়ে একতরফা সালিশ করে দিয়েছে , এই ভূমিহীন লাইলী বেওয়াকে উচ্ছেদ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্জাকসহ তার কিছু লোকজন। এই সালিশে গ্রামবাসীর কোন মতামত ছারাই একতরফা বিচার করে চেয়ারম্যান।

মোখলেসুর রহমান বলে, আব্দুর রাজ্জাক পরিষদের অভিযোগ দিলে চেয়ারম্যান মেম্বার এসে আমিন দিয়ে জায়গাটি মেপে আমাকে ও আব্দুর রাজ্জাককে সমানভাবে ভাগ করে দিয়ে যায়। আমি বলেছি আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ৪ হাত ও আমার দিকে ৪ হাত জায়গা দিলে এখানে সুন্দর একটি ঘর নির্মাণ করা সম্ভব।

 আধাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান, এ.কে.এম রেজাউল করিম পল্টন বলে :আমি সরকারি জায়গা মেপে দেখে বলেছি যার দখলে যেভাবে আছে সেভাবেই ভোগদখল করে খাও, তবে এখানে কোন স্থায়ী স্থাপনা করা যাবে না 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান ছনি বলেন, রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা ভোগদখলের অধিকার কারো নেই। সরকারি জায়গা ফাঁকা থাকবে।