নারী ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন

নারী ফুটবল বিশ্বকাপ পেলো নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে নিয়েছে স্প্যানিশ মেয়েরা

নারী ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন

নারী ফুটবল বিশ্বকাপ পেলো নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ফুটবল দলকে ওলগা কারমোনার একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে নিয়েছে স্প্যানিশ মেয়েরা।

অথচ, স্পেনের এই বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে জড়িয়ে রয়েছে অনেক বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, দুঃখ, কষ্ট। যে দলের কোচের বিরুদ্ধে এক সময় বিদ্রোহ করেছিলেন দেশটির প্রায় সব ফুটবলারই। যে কোচের সঙ্গে এখনও ফুটবলারদের সম্পর্ক ভাল নয়, যে কোচের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বকাপেই খেলেননি প্রথম সারির প্রায় ১২ জন ফুটবলার।

সেই দলটিই সব প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্বকাপ হাতে তুলে নিয়েছে। কোনও অংশেই কম নয় ‘লা রোজা’দের এই কৃতিত্ব। স্পেনের পুরুষ দলের সোনালি প্রজন্ম ২০১০ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল। তার ১৩ বছর পর মেয়েদের দলের সোনালি প্রজন্মও শিরোপা ঘরে তুলল।

স্পেনের এই বিশ্বজয়ে যিনি সবচেয়ে আলোচিত, তিনি কোনো ফুটবলার নন। কোচ জর্জ ভিলদা। এই ভিলদাকে নিয়ে কিছুদিন আগ পর্যন্ত স্পেনের ফুটবলারদের মধ্যে প্রবল বিদ্রোহ ছিল। এই কোচকে দলের বেশির ভাগই পছন্দ করেন না।

তাদের দাবি, অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং মানসিক চাপ তৈরি করেন ভিলদা। সে কারণে ফুটবলাররা মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন না। স্পেনের ফুটবল সংস্থা অবশ্য কোনও দিন তাদের দাবিকে পাত্তা দেয়নি। তারা বরাবর ভিলদার পাশে দাঁড়িয়েছে। ফুটবলারেরা প্রতিবাদ করেও দেশের কথা ভেবে একত্রিত হয়েছেন। যার ফল বিশ্বকাপ জয়।

কোচের সঙ্গে স্পেন ফুটবলারদের সম্পর্ক কতটা খারাপ? বোঝা গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচেই। ওই ম্যাচেও শেষ মুহূর্তে ওলগার গোলে জয় পায় স্পেন। কিন্তু ম্যাচের পর কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের একসঙ্গে উদযাপন করতে দেখা যায়নি।

সাধারণত ম্যাচের পর কোচের সঙ্গেই ফুটবলারেরা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। স্পেনের ক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক উল্টোটা। ফাইনালের পরও এর পরিবর্তন নেই। স্পেনের ফুটবলাররা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যখন নাচানাচি করছিলেন, তখন সেখানে কোচ থাকলেও তাকে বাকিদের চেয়ে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছিল।

গত ১২ মাসে স্পেনের নারীদের ফুটবল টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে। রোববারের ফাইনাল শুধু নয়, পুরো প্রতিযোগিতাতেই খেলেননি স্পেনের প্রায় সব সেরা ফুটবলার। নেই মাপি লিওন, যিনি ইউরোপের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক। বার্সেলোনায় তার সতীর্থ ক্লদিও পিনাও বিশ্বকাপে খেলেননি। তারা থাকলে বিশ্বকাপে নামার আগেই স্পেন ট্রফির দাবিদার হয়ে যেত। উল্টো এমন অবস্থার মধ্যে তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে- এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।

জাতীয় দলের হয়ে প্রায় শততম ম্যাচ খেলতে চলা ইরেন পারেদেস বিদ্রোহটা শুরু করেছিলেন। এই ইংল্যান্ডের হাতেই গত ইউরো কাপে হারের পর নারী দলের প্রতি সঠিক ব্যবহারের দাবি তুলেছিলেন তিনি। মেয়েদের ফুটবলের খোলনলচে বদলে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। গুজব রটেছিল যে কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের সম্পর্ক এতটাই খারাপ যে তা আর সারানো যাবে না। তবুও ভিলদাকে কোচ রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর গত সেপ্টেম্বরে ১৫ জন ফুটবলার একসঙ্গে ফুটবল ফেডারেশনকে ই-মেইল করেন।

সেই ১৫ জন ছিলেন আইতানা বোনমাতি, মারিওনা কালদেনতে, ওনা বাতলে, পাত্রি গুইজারো, মাপি লিওন, সান্দ্রা প্যানোস, ক্লদিয়া পিনা, লোলা গালার্দো, আইনহোয়া মোরাজা, নিরিয়া এইজাগিরে, আমিউপ সারিয়েগি, লুসিয়া গার্সিয়া, লিলা ওউহাবি, লাইয়া আলেকজান্দ্রি এবং আন্দ্রিয়া পেরেরা।

তাদের অভিযোগ, নারী দলে খেলার ফলে তাঁদের মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শারীরিক অবনতি হয়েছে। ভিলদাকে সরাসরি সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেননি কেউই। কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কোচকে নিয়ে খুশি নন তারা। অনুশীলনের পদ্ধতি, ফুটবলারদের প্রতি আচরণ, পরিকাঠামোর অভাব- ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ ছিল।

পাশাপাশি স্পেনের ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা জানিয়েছিলেন, ঘরোয়া লিগের ম্যাচ খেলতে এক শহর থেকে অন্য শহরে বিমানে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ট্রেনে নিয়ে যাওয়া হতো। দীর্ঘ ভ্রমণে মাঠে নামার আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তারা।

এরপর মার্চে ফুটবলারদের সঙ্গে ফেডারেশনের বৈঠকের পর পরিস্থিতি ভাল হয়। দলে যোগ দেন পারেদেসা। বিশ্বকাপের আগে পরিস্থিতি ক্রমশ ঠিক হচ্ছিল। ইমেল পাঠানো ১৫ জনের মধ্যে আট জন দলে যোগ দেন। সেখানে বাতলে, কালদেনতে এবং বোনমাতির মতো তিন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারও ছিলেন। আগেই যোগ দিয়েছিলেন পুতেয়াস, হারমোসো এবং পারেদেস। কিন্তু লিয়নের মতো কিছু ফুটবলারের মতো তাতেও গলেনি। কোচের সঙ্গে সমস্যাও পুরোপুরি মেটেনি। ফলে বিশ্বকাপের আগে স্পেনকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই।

কিন্তু যাকে নিয়ে বিতর্ক, সেই ভিলদা ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। ফাইনালে ওঠার আগে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকে অনেক কথাই বলেছে যা সত্যি নয়। যখন মানুষের মতামত নিয়ে অসত্য, অন্যায্য এবং মিথ্যা জল্পনা তৈরি হয়, তখন খুবই ব্যথা লাগে।’