‎হবিগঞ্জে দুই বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা-নানা অনিয়মে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ‎

হবিগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গুরুতর অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে দুইটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে

‎হবিগঞ্জে দুই বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা-নানা অনিয়মে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা  ‎

স্বপন রবি দাশ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:হবিগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গুরুতর অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে দুইটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

‎জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল আজ বুধবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে।

‎প্রথমে পরিদর্শন করা হয় শহরের ‘হেলথ কেয়ার হাসপাতাল’। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির লাইসেন্স ২০২১-২২ অর্থবছরের পর নবায়ন করা হয়নি। ফার্মেসিরও কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসক না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি রোগী রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীও নেই।

‎ল্যাব পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রশিক্ষিত ল্যাব টেকনোলজিস্ট ছাড়াই রোগ নির্ণয়ের কাজ চলছিল। নেই কোনো পৃথক স্যাম্পল সংগ্রহের কক্ষ। ব্যবহৃত হচ্ছিল নিম্নমানের রিএজেন্ট, আর পুরো হাসপাতালজুড়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মানসম্মত কালার কোডেড বিন ব্যবহার করা হচ্ছিল না।

‎অপারেশন থিয়েটারেও দেখা যায় চরম অব্যবস্থা। অটোক্ল্যাভ কীভাবে চালাতে হয়, তা সংশ্লিষ্ট কর্মীরা জানেন না। অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে অন্য চিকিৎসক থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছিল না।

‎এরপর পরিদর্শক দল যান ‘আল রাফি হাসপাতাল’-এ। সেখানে প্রবেশ করতেই প্রস্রাবের তীব্র দুর্গন্ধে কষ্ট হয় বলে জানান অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা। এ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন হয়নি ২০১৯-২০ সালের পর থেকে।

‎হাসপাতালটিতে কোনো চিকিৎসক, নার্স কিংবা পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাওয়া যায়নি। ল্যাবের ফ্রিজে সংরক্ষিত ছিল খাদ্যদ্রব্য, ব্যবহৃত হচ্ছিল নিম্নমানের রিএজেন্ট। নেই কোনো আলাদা স্যাম্পল কালেকশন রুম।

‎অপারেশন থিয়েটারে পাওয়া যায় নষ্ট এনেস্থিসিয়া মেশিন ও অকার্যকর অটোক্ল্যাভ। নেই সার্জনের জন্য নির্ধারিত ওয়াশ বা চেঞ্জ রুম। ব্যবহার করা হচ্ছিল নিম্নমানের অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি।

‎সবশেষে, এসব গুরুতর অনিয়মের প্রেক্ষিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলথ কেয়ার হাসপাতাল ও আল রাফি হাসপাতালকে তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করে দেন। পাশাপাশি, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা করে প্রশাসনিক জরিমানা করা হয়।

‎পরবর্তীতে যথাযথ লাইসেন্স নবায়ন, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটারের মান উন্নয়ন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য অনিয়ম দূর করা হলে প্রতিষ্ঠান দুটি পুনরায় চালুর অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।‎