যারা সনদ সই অনুষ্ঠানে গিয়েছ তারা জনগণ থেকে ছিটকে গেছে-নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যেই দলগুলো জুলাই সনদে সই করেছে তাদের ভিন্ন দাবি আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই এবং দাবিরও মিল নেই।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যেই দলগুলো জুলাই সনদে সই করেছে তাদের ভিন্ন দাবি আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই এবং দাবিরও মিল নেই। যারা গতকালকের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল, যেই প্রক্রিয়ায় সই দিয়েছে, গণঅভ্যুত্থান এবং জনগণ থেকে তারা ছিটকে গেছে। ফলে আমরা চাই তারা জনগণের কাছে আসুক।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বাংলা মোটরে এনসিপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদে সই কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। এটা আমরা আগেও বলেছি, যদি এর কোনও আইনি ভিত্তি না, তবে হয় এর কোনও অর্থ তৈরি হবে না। ফলে আমরা এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেইনি। যদি এর আইনি ভিত্তি তৈরি না হয় এটা কেবল আর আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না এটি একটি গণপ্রতারণা এবং জাতির সঙ্গে একটি প্রহসন হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে এই অভিজ্ঞতা আমরা দেখেছি। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরেও তিন দলের জোটের যে রূপরেখা মনে আছে সেই রাজনৈতিক সমঝোতা কিন্তু রক্ষা করা হয়নি। ফলে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে যেই দলগুলো আমাদের সঙ্গে ছিলেন তাদের প্রতি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, বরং সংবিধানের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি আমরা পরিবর্তন করতে চাই তার অবশ্যই একটি আইনি ভিত্তি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এই ৭২-এর সংবিধান যাতে পরিবর্তন না হয় পুরানো ফ্যাসিস্ট কাঠামো যাতে থেকে যায়, তার জন্য নানা অপচেষ্টা দেশের ভেতর এবং বাইরে থেকে করা হচ্ছে। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সুবিধাভোগী আছে নানা জায়গায়। ফলে তাদের জায়গা থেকে চাপ অবশ্যই আছে এবং আমরা মনে করি কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও আপোষ করেছে। সেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো টিকিয়ে রাখতে, অক্ষুণ্ন রাখতে চেষ্টা করেছে নানাভাবে। কিন্তু এনসিপি ও আরও কিছু রাজনৈতিক দল অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার চাপেই কিন্তু এই সরকার কমিশন গঠন, ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং জুলাই সনদ নিয়ে এতদূর এসেছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ৯০-এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে দেখতে চাই না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের এই উপলব্ধি ছিল যে আমাদের এই লড়াই শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয় একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হবে না বরং এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। দ্বিতীয়ত ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যে প্রতারণা করা হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে যেভাবে জাতীয় নেতারা এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে পকেটবন্দি করেছিল আমরা এবার সেটা হতে দেবো না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, সরকার এটাকে আইনি ভিত্তি দেয়নি, অনেক রাজনৈতিক দল এগুলো নিয়ে বলেছে, অনেকে বলে নাই, তারা সই করেছে এটা নিয়ে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু এখন আমরা বলছি এখন এটার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আইনি ভিত্তির মাধ্যমে এটি অর্থবহ হবে। এছাড়া এর কোনও অর্থ থাকবে না। ফলে সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি আমাদের এই আহ্বান থাকবে। গতকাল সেখানে জুলাইযোদ্ধা, শহিদ পরিবারদের কীভাবে অবমাননা করা হয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনও প্রতিফলন গতকালকের অনুষ্ঠানে হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন একটি আদেশ জারির মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি তৈরি করবে এবং সেই ভিত্তি অনুসারে গণভোট এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এবং গণপরিষদ একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, কেউ ছবিতে আসলো কী আসলো না সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা দায়িত্ব প্রফেসর ইউনূসকে দিয়েছিলাম এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম ছাত্র-জনতা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। একটা নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিন, সাংবিধানিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করুন। জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্ব দিন। তারা আমাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলেই আমাদের সরকারে প্রবেশ করতে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে হয়েছে। ফলে যেই নতুন বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি সেই বাংলাদেশ কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া আসলেই সম্ভব—সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা। সেখানে যেকোনও রাজনৈতিক দল, সরকার যদি এগিয়ে আসে আমরা তাদের সমর্থন জানাবো, আমরা তাদের সঙ্গে থাকবো। কিন্তু কেউই যদি না থাকে আমরা এককভাবে আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যাবো।
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, গতকাল বেশিরভাগ দল সই অনুষ্ঠানে গেল। তারা সরকারের আমন্ত্রণে গেছেন। কিন্তু পুরো ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা জুড়ে সংস্কারের সঙ্গে অনেকগুলো দল আমাদের সঙ্গে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছে। আইনি ভিত্তির কথা কিন্তু গতকাল সইয়ের পরেও বলেছেন। ফলে আমরা মনে করি আমাদের ঐক্যটা আছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সাংবিধানিক এখতিয়ার বৈধতা বর্তমান রাষ্ট্রপতির নেয়। সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হলে তার বৈধতা নিতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে—যেখানে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটেছিল। ফলে জুলাই গণভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি ধারণ করতে পারেন না। তার কাছ থেকে এই আদেশ জারি হলে রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ রাষ্ট্রপতি চুপ্পু সাহেব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনও প্রতীক নন। বরং প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার আহ্বানে সেই সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন এবং ছাত্র-জনতার অভিপ্রায় সবকিছু তার কাছে অর্পণ করা হয়েছে।ফলে আমরা বলছি সাংবিধানিক আদেশ যেহেতু বিদ্যমান সংবিধানের ভেতর থেকে দিতে পারবেন না, ফলে তার বাইরে থেকেই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বৈধতার একমাত্র উৎস হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং সেটা একমাত্র জারি করতে পারবেন সরকার প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে তার ওপর দাঁড়িয়ে সনদ আইনি ভিত্তি পাবে।
চাঁপাই প্রেস/সূত্র_বাংলা ট্রিবিউন