আখতার হোসেনের উপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় এনসিপি নেতারা যা বললেন

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে ডিম নিক্ষেপ ও হেনস্তার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আখতার হোসেনের উপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় এনসিপি নেতারা যা বললেন
সংগ্রহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য তাসনিম জারা তার পাশে ছিলেন। সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে ডিম নিক্ষেপ ও হেনস্তার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের কেনেডি বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এই হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এনসিপি নেতারা।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লিখেছন, হাসিনার পুলিশ লীগ, কোট-কাচারিও আখতারকে দমন করতে পারেনি। আর এসব উচ্ছিষ্ট, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত দালালরা বিদেশে বসে প্রতিবাদের প্রতীক আখতারকে দমন করতে পারবে?

হাসনাত আরও লিখেছেন, আওয়ামী দালালদের পক্ষে টকশো আর যুগলবন্দী কলামে যারা ‘সম্মতি’ উৎপাদন করে, তাদেরও কেন প্রত্যাখ্যান করা উচিত — এটা না বুঝলে, কিছুদিন পর এই আক্রমণের শিকার হতে আপনি প্রস্তুত থাকুন।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, এই পা চাটা দালাল এবং জনতার ভয়ে জান নিয়ে পালিয়ে যাওয়া তাদের মা হাসিনা- হাজারের অধিক খুনের নির্দেশদাতা। বিগত ১৭ বছরে এই দেশে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, ধর্ষণ থেকে শুরু করে এমন কোনো ঘৃণিত কাজ ও অন্যায় নেই, যা তারা করেনি।

তিনি আরও বলেন, ওদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। দালালি করতে করতে আর পা চাটতে চাটতে এরা এদের বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলেছে। এরা এদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য অভিশাপ।

সারজিস বলেন, এই নরপ'শুদের আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময় এই শয়তানদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন তারা সাবধান হয়ে যান। সুযোগ পেলে এই কালো সাপগুলো আপনাদেরকেই ছোবল মারবে।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন লিখেছেন, ড. ইউনূস নিজের স্বার্থে পার্টিগুলোকে ব্যবহার মারফত ম্যান্ডেট কামাই করে যাচ্ছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও পরর্বতীতে এনসিপির রাজনৈতিক শক্তিকে নিজের পক্ষে শো অফ করে শক্তিশালী হয়েছেন ষোল আনা। কিন্তু নিজের সফরসঙ্গীদের, তার চেয়ে বড় কথা জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা আখতার হোসেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ন্যূনতম আদব না দেখিয়ে তিনি তার দুরভিসন্ধি প্রকাশ করে দিয়েছেন।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন লিখেছেন, নিউইয়র্কে জারাকে যে অকথ‍্য ভাষায় আক্রমণ করা হলো আখতারের ওপর হামলা করা হলো, তাও বাংলাদেশ সরকারের সফর সঙ্গী হিসেবে এর চেয়ে নিন্দনীয় কিছু হতে পারে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। কেন এরা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। কেন তারা একমাত্র নারী রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। অন্তর্বর্তী সরকারকে এদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জারার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মুখে নারী নারী করে ফেনা তুলে ফেলে, অথচ সাথে করে নিয়ে তাকে আক্রমণের মুখে ফেলে রেখে চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আখতার শুধু এনসিপির নেতা না, আখতার ফ‍্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন্ত প্রতীক। ইতিহাস সাক্ষী, আখতার রাজপথে থেকে, জেল জুলুম সহ‍্য করে হাসিনাকে বিতারিত করেছে দেখেই আজকে আপনারা একেকজন উপদেষ্টা। যার অবদানে সরকার হইছেন তাকেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ধিক্কার জানাই। এনসিপি এর জবাব নিয়ে ছাড়বে।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আখতার হোসেনের ওপর হামলা আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা দেশ থেকে পালিয়ে বাধ্য হয়। বিদেশে পালিয়েও তাদের যড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।তিনি হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে অনুরোধ জানান।

আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় আরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার আরেক সফরসঙ্গী দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি লেখেন, এ হামলার ঘটনায় পরাজিত শক্তির ভয় ও হতাশার চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।

সূত্র বাংলা ট্রিবিউন