চার পাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাক্সক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। সুতরাং আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না- যাতে করে প্রতিপক্ষ আপনাদের মধ্যকার বিরোধের সুযোগ নিতে পারে। এ অবস্থায় দলের চূড়ান্ত হওয়া ‘একক প্রার্থীকে বিজয়ে’ সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

চার পাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে
সংগ্রহীত ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাক্সক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। সুতরাং আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না- যাতে করে প্রতিপক্ষ আপনাদের মধ্যকার বিরোধের সুযোগ নিতে পারে। এ অবস্থায় দলের চূড়ান্ত হওয়া ‘একক প্রার্থীকে বিজয়ে’ সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

গতকাল রাতে দলের এক অনুষ্ঠানে ‘শিগগিরই দলীয় একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে’ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি এ আহ্বান জানান।

রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে প্রবাসে বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণের কর্মসূচি হিসেবে বিএনপির ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। লন্ডন থেকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত। বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক সাইফ আলী খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তারেক রহমান বলেন, শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম আমরা জানিয়ে দেব দলের পক্ষ থেকে। দল যাকে যে আসনে নমিনেশন দেবে বা দেয় অনুগ্রহপূর্বক তাকে বিজয়ী করে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ দয়া করে কাজ করবেন। তারেক রহমান বলেন, প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী। আপনারা যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন- আপনারা সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক, বিএনপির কর্মী, ধানের শীষের সমর্থক।

মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন বা জিতছেন বা জিতবেন। বিজয়ী হবে দেশ এবং গণতন্ত্র। নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা হয়, দেশ এবং জনগণের জন্য মাদার অব ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয়, আপনারা এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। সারা দেশে বিএনপির লাখো-কোটি সমর্থক বিব্রত হয় আপনারা কেউ এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন।

জনগণকে সঙ্গে রাখুন। আপনাদের সামনে আমি সেই স্লোগানটি উচ্চারণ করতে চাই- ‘ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গড়ব মিলেমিশে।’ তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানানোর পর নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করবেন। জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি যথাসম্ভব সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে দেশের তিন শ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।

জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন- করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের। দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন- এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা- দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নেবেন দয়া করে। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন। আপনাদেরকে আমি আবারও স্বাধীনতার ঘোষকের সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’।

তারেক রহমান বলেন, শুধুমাত্র বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ইনশা আল্লাহ। পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে হয়তো বা সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে। তারেক রহমান বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকেও যতটুকু সম্ভব যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।

তিনি বলেন, কৌশল এবং অপকৌশলের মধ্যে আমরা পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাঁটতে হয় কি না বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।

তারেক বলেন, প্রবাস থেকে এবারই প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কারণে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কারও কারও কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবুও প্রবাসীদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ চালু করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই।

জনগণের রায় নিয়ে ইনশা আল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভবিষ্যতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি আরও কীভাবে সহজ করা সম্ভব হয়- সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তারেক বলেন, দেশে এবং বিদেশে আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র এবং সমাজের উদাসীনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে। অথবা কোথায় জানি কি একটা সন্দেহ দোলা দিয়ে উঠছে। আমি গতকালকের একটি পত্রিকায় দেখেছি, একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টে দেখলাম, গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর ভিতর সাতজনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৮৯ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। আমি শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহিলা দল নয়। মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজসহ সব মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই আপনারা যার যার অবস্থান থেকে আমাদের কন্যা-মা-বোনদের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে এলাকাভিত্তিক প্রস্তাব তৈরি করুন। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্র অবশ্যই উদাসীন থাকতে পারে না। সরকার এবং প্রশাসনকে অবশ্যই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আজ নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠনে আমাদের যে কোনো অবস্থান বা ভূমিকা রাখা। নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিএনপিকে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসার জন্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারেক রহমান।

চাঁপাই প্রেস/সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।