এমটিএফইর সিও মুনির ও মিজানের প্রতারণা-নিঃস্ব চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমজনতা

গত ১৭ আগস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ আটকে গেছে এতে অনেকে হয়েছেন নিঃস্ব

এমটিএফইর সিও মুনির ও মিজানের প্রতারণা-নিঃস্ব চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমজনতা

দুবাইভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এমটিএফই) ছিল লোভনীয় অফার। শরীয়াহ-সম্মত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে এতে বিনিয়োগ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ও বিভিন্ন পণ্য কিনে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখানো হয় সাধারণ মানুষদের।

এই প্ল্যাটফর্মে। এটি অনেকটা পঞ্জি স্কিমের মতোই ছিল। বিনিয়োগকারীরা নতুন কাউকে দিয়ে বিনিয়োগ করাতে পারলে অতিরিক্ত বোনাস পাবেন, এমন অফারও ছিল।

লোভে পড়ে বিনিয়োগের নামে বাংলাদেশের উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ের কয়েক হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা চলে যায় এমটিএফইতে।

গত ১৭ আগস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ আটকে গেছে, এতে অনেকে হয়েছেন নিঃস্ব।

জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে এমটিএফই থেকে মুনাফা, আসল বা কোন রকম টাকা উঠানো যাচ্ছিলো না, এ অবস্থায় সব কিছু জেনেও সিও মনিরুল ইসলাম মুনির (৪০) মিজানুর ওরফে মিজান (৩৫) ১৬ আগষ্ট পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষকে এমটিএফই সদস্য করেছেন।

মুনির ও মিজানের প্রতারণার শিকার বারঘরিয়া ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার অপু কুমার জানান, মুনির ও মিজানের মাধ্যমে গত ১২ আগষ্ট আমি ঋণ করে ৬০.০০০ হাজার টাকা দিয়ে এমটিএফই সদস্য হোয়, এর ৬ দিনের মাথায় এমটিএফই বন্ধ হয়ে যায়। মুনির ও মিজানের কারনে আজ আমি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, যেখানে ১৫ দিন আগে থেকে এমটিএফ থেকে টাকা তোলা যাচ্ছিলো না এই অবস্থায় মুনির ও মিজান আমাকে কেন সদস্য করলো, আমার টাকা সবটাই মুনির ও মিজানের পকেটে আছে। আমি ঋনের টাকা এখন কি করে শোধ করবো।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বটতলাহাট এলাকার গৃহবধূ শান্তনা রাণী বলেন, মুনির ভাই, মিজান ভাই আমার সাথে এতো বড় প্রতারণা করবে আমি বুঝতে পারিনি, এমটিএফই বন্ধ হওয়ার আগে ৭ দিনের ব্যবধানে আমার কাছে দু'দফায় ৫০.০০০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন আমি কি করবো এক দিকে এতো গুলো টাকা অন্য দিকে এমটিএফই বন্ধ হওয়ায় আমার স্বামী আমাকে নির্যাতন করে বলছে মুনির, মিজানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয় নয়তো তোকে তালাক দিব। 

বারঘরিয়া ইউনিয়নের সুজন পেশায় লাপিত তার দোকান পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বিদিরপুর মোড়ে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর তার দোকানে বেশ কয়েকজন যুবক এসে তার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয় এবং তার দোকানের শাটার নামিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন পুলপাড়ার ইমনের টাকা ফেরত দিয়ে মোবাইল নিবি ও দোকানদারী করবি নয় তোর খবর আছে।পরর্বতীতে সূজন টাকা ধার করে রফাদফা করেন তাদের সাথে। 

এ বিষয়ে সূজন বলেন, মিজান ভাই আমাকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানি লাইসেন্স আছে, কোম্পানি পালাবেনা বলে গ্যারান্টি দিয়েছিলো, কোম্পানি পালানোর সপ্তাহ খানেক আগেও অনেককে সদস্য করেছি। আমি সামান্য লাপিতের কাজ করি বেশি লাভের আশায় ধারদেনা করে ৬০.০০০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে আমি এখন সর্বশান্ত, এরপরে অনেকেই তাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর আমার মোবাইল কেড়ে নিয়েছিলো, আমার দোকানের শাটার লাগিয়ে দিয়েছিলো। টাকা ফেরত দিয়ে এই যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি। মিজান ভাইকে বিষয় গুলো বললেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন, আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্তান পরবর্তীতে আবারও ঝামেলা হলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবেনা।

অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম মুনির আলীনগর মিল্কী বাগানপাড়ার মৃত ইউসুফ আলী'র ছেলে এবং মিজানুর ওরফে মিজান বিদিরপুর মিল্কী নতুন বাগানপাড়া এলাকার হোসেন আলীর ছেলে। 

বারঘরিয়া ইউনিয়নের গৃহবধূ শিউলী বলেন, মিজান ও মুনির ভাইয়ের কারনে আমার ২৫০০০ টাকা এমটিএফইতে লগ্নি করেছিলাম, এমটিএফই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি নিঃশ্ব হয়ে গেছি। মিজান ভাইকে মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন না। আমরা গরিব মানুষ কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।

এমটিএফই আর্থিক কেলেঙ্কারির ও প্রতারণা বিষয়ে মুনির ও মিজানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মুনিরের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় আর মিজান ফোন রিসিভ করে নিজেকে এমটিএফই সিও স্বীকার করলেও প্রতারনার কথা বলতেই ফোন কেটে দিয়ে মোবাইলের সুইজ অফ করে দেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের বেশ কয়েক জন এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে শিঘ্রই সিও মুনির ও মিজানের নামে মামলা করবো।