এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন আসিফ নেহাল
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা এবং দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আসিফ মোস্তফা জামাল
চাঁপাই প্রেস ডেস্ক:জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা এবং দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আসিফ মোস্তফা জামাল (নেহাল)। দলের সদস্য সচিবের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ১০ টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজেও তিনি এই ঘোষণা দেন।

আসিফ নেহাল এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি প্রচার ও প্রকাশনা সেল এবং পরিবেশ সেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সোশ্যাল মিডিয়া উপ-কমিটির সেক্রেটারি হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণায় তিনি উল্লেখ করেন- আমি আসিফ মোস্তফা জামাল (নেহাল), জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য; সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা সেল; সদস্য, পরিবেশ সেল এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সোশ্যাল মিডিয়া উপকমিটির সেক্রেটারি পদসহ দলের সকল দায়িত্ব ও পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এনসিপির প্রতি জনসাধারণের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, সেই আকাঙ্ক্ষার সাথেই আমিও এই রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। প্রায় ১৪০০ শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং নতুন রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি এনসিপি দিয়েছিল দুঃখজনকভাবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দলটি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামো ও একই রাষ্ট্রীয় কলকব্জা ভাঙার পরিবর্তে এনসিপি ধীরে ধীরে ঠিক সেই ব্যবস্থার ভেতরেই নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। ক্ষমতার রাজনীতিতে গড়পড়তা অন্য দলের মতো ঝুঁকে পড়া জনতার সাথে এই অবস্থানগত বিচ্ছেদ মূলত বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। কথার সাথে কাজের ন্যূনতম মিলও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একইসাথে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে বলতে চাই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী যে বিপ্লবী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিনষ্ট করা হয়েছে। বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে যে ছাত্র-জনতা এই দলে যুক্ত হয়েছিল, তাদের সাথে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। দিনের পর দিন অবহেলার শিকার হয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।
গণঅভ্যুত্থানের পর এনসিপি যদি একক অবস্থানে থেকে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতি অটল থাকতে পারত, তাহলে এই দল ও এই প্রতীক একটি স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারত। কিন্তু রাজনৈতিক সওদা ও আপসের পথ বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের আদর্শিক সত্ত্বাকেই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। সওদার মাধ্যমে কখনোই বিপ্লব ঘটানো যায় না ইতিহাস তার সাক্ষী।
এই সংকটময় সময়ে সকলের প্রতি আমার একটিই আহ্বান রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন হওয়া, সামনের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং অগ্রণী চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে নতুন ধারার নেতৃত্ব গড়ে তোলা। ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী ও বাংলাদেশপন্থী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশ এখন সময়ের দাবি। কেবলমাত্র সংসদ কখনোই বিপ্লবের ক্ষেত্র হতে পারে না—জনতাই সকল ক্ষমতার উৎস।
আমাদের জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শহীদ ওসমান হাদি ভাইয়ের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জুলাইয়ের প্রশ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আজ জুলাইয়ের গাজীদের ওপর বর্বরভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এসব সকল প্রকার বিশৃঙ্খলা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে।
দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সম্মান মাথায় রেখে এই সংগঠনের সকল ব্যর্থতার দায় আর নিজের কাঁধে নিয়ে এক মুহূর্তও থাকতে চাই না। ছাত্রজীবন থেকে সকল অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে কাজ করেছি, আগামীতেও করে যাব। সংগঠন থেকে বেরিয়ে এলেও আমি রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছি না। রাজপথে ছিলাম, রাজপথেই থাকব—ইনশাআল্লাহ।




