সবার আগে বাংলাদেশ
দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একজন নেতার প্রত্যাবর্তন নয়,
দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একজন নেতার প্রত্যাবর্তন নয়, এটি দেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। প্রায় ১৮ বছর পর তাঁর ফিরে আসাকে বিএনপি দেখছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে। দলটির নেতাকর্মীদের মতে, বিভাজন আর অনিশ্চয়তায় ক্লান্ত বাংলাদেশের মানুষ আবারও একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক দিশা খুঁজে পাচ্ছে।
তারেক রহমানের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি পরিষ্কার দর্শন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।

এই দর্শনের মধ্য দিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে কোনো বিদেশি প্রভাব বা অন্ধ আনুগত্যের জায়গা নেই। ঢাকার নয়াপল্টনে এক সমাবেশে তাঁর উচ্চারণ করা কণ্ঠস্বর ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, সবার আগে বাংলাদেশ’ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, এই বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।
আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে, সেই প্রশ্নে তারেক রহমান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষি ও কৃষকের ওপর।
তাঁর মতে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের চাপে কৃষিজমি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এতে শুধু খাদ্য নিরাপত্তাই নয়, দেশের অস্তিত্বও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এ বাস্তবতা থেকে তিনি কৃষকদের জন্য ‘কৃষক কার্ড’ চালুর পরিকল্পনার কথা বলেছেন। এই কার্ডে কৃষকের জমির তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এবং একটি ফসল উৎপাদনের পূর্ণ খরচ রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে।
বিএনপির দাবি, এতে বর্গাচাষি ও ভূমিহীন কৃষকদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে, অনাবাদি জমি আবার চাষের আওতায় আসবে।
কৃষকের পাশাপাশি তারেক রহমান গুরুত্ব দিয়েছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে। তাঁর প্রস্তাবিত সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনার আওতায় প্রান্তিক পরিবারগুলোর জন্য কার্ড বিতরণের কথা বলা হয়েছে, যার অংশীদার হবেন পরিবারের নারীপ্রধান সদস্য। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, উন্নত রাষ্ট্র গঠনে সমাজের প্রতিটি শ্রেণিকে সমানভাবে অংশীদার করা ছাড়া টেকসই সমৃদ্ধি সম্ভব নয়।

তরুণদের নিয়ে তারেক রহমানের ভাবনা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার প্রধান শক্তি তরুণ সমাজ। সে জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় ভাষা শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার সুযোগ তৈরি হলে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের তরুণরা আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। চীন, জাপান, ইউরোপ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে- এমনটাই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তারেক রহমান আশাবাদী। তাঁর মতে, সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে বাংলাদেশের তরুণরাই ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবসার নেতৃত্ব দিতে পারে। এই স্বপ্ন তরুণদের মধ্যে নতুন করে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারেক রহমান নিজেকে মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে তুলে ধরেছেন। ডান, বাম ও মধ্যপন্থী বিভাজনের মধ্যে তিনি এমন এক অবস্থানে দাঁড়াতে চান, যেখানে জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবাইকে একত্র করা সম্ভব। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন এমন একজন নেতা, যাঁর রাজনীতির মূল ভিত্তি মা, মাটি ও মানুষ।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের নতুন ইনিংস। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই তিনি এগোচ্ছেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই পথচলায় ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তার মূলমন্ত্র হয়ে উঠবে।সূত্র_কালের কন্ঠ




