ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপর্যস্ত ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি

কৃষি জমির ক্ষতি ও দেশের ভূ-প্রকৃতি ধ্বংস করে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমছে চাষাবাদের জমি ও গাছ

ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপর্যস্ত ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি

সুজিত কুমার চক্রবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধিঃ  ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় বিভিন্ন আইন, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও ইটভাটার দৌরাত্ম্য কমছে না। মালিকরা মানছে না কোনো নিয়মকানুন, ক্রমেই কৃষি জমির ক্ষতি ও দেশের ভূ-প্রকৃতি ধ্বংস করে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, কমছে চাষাবাদের জমি ও গাছ। 

নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। আইন অমান্য করে কাঠ পোড়ানো হলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা বা নজরদারি।

সূত্রে মতে,নাসিরনগর উপজেলার প্রায় ৩০ টির মতো ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশের অনুমতি নেই স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩তে উল্লেখ আছে, ইটভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করলে প্রথমবারের জন্য দুই বছরের কারাদন্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের জন্য ভাটা কর্তৃপক্ষকে ২ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করলে এক বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কিন্তু প্রশাসন সঠিকভাবে আইন বাস্তবায়ন না করায়, ইটভাটার আগ্রাসনও বন্ধ হচ্ছে না। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার চাতলপাড়, গোয়ালনগর, কুন্ডা, নাসিরনগর, গোকর্ণ, পর্বভাগ, বুড়িশ্বর, হরিপুর ইউনিয়নের আবাদি জমির উপরের অংশের মাটি এক থেকে দুই ফুট গর্ত করে এবং কোথাও কোথাও কোমর সমান গর্ত করে কাটা হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে রোপণ করা ধানিজমির ধানগাছসহ মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার কাজ দ্রুত করার জন্য উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় বুলডোজার ব্যবহার করে মাটি অবৈধ ট্রলিতে বোঝাই করে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ইটভাটায় প্রায় ১৫০ থেকে ২৫০ ট্রলি ইটভাটায় মাটি কাটার জন্য নিয়োজিত রয়েছে।

উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বুড়িশ্বর ও আশুরাইল জনবসতি, রাস্তার ও স্কুলের পাশে ২ টি ইটভাটা নাসিরনগর খুকুরিয়া ব্রীজের কাছে ১ টি এবং তিতাস নদীর উত্তর পাশে নাসিরনগর ব্রাহ্মণ বাড়িয়া আঞ্চলিক মহা সড়কের দুই পাশে ৪ টি ইট ভাটা রয়েছে। কয়েকটির সাময়িক অনুমতি থাকলেও অনেকটির অনুমতিসহ নেই কোন বৈধ কাগজপত্র।এসব ইটভাটা থেকে ট্রাকে ইট সরবারাহ করার ফলে সড়কটি ভেঙে খানাখন্দে ভরে গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই কাঁদা এবং রোদে ধুলাবালিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সড়কগুলো দিয়ে হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ প্রতিদিন শত শত লোক চলাফেরা করে। কুন্ডা ইউনিয়নের নাসিরনগরও ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার আঞ্চলিক সড়কের দু'পাশে ঐতিহ্যবাহী তিতাস নদীর দু'পাশে ইটভাটাগুলো গড়ে উঠেছে । গোকর্ণ পূর্বভাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের এমন চিত্র দেখা যায়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অধীনে নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোনো ভারী যানবাহন দিয়ে ইট বা ইটভাটার কাঁচামাল আনা নেওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। 

মোঃ জামাল মিয়া,ওয়াজ উদ্দিনসহ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুতে বাড়িঘরে থাকা দায় হয়ে পড়ছে, জমির ফসল জমিও নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভাটার চারদিকের জমিগুলো এক সময় অনাবাদি হয়ে পড়বে। ভাটার মালিকরাপ্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। হরিপুর ইউনিয়নের জমিদার বাড়ি ও তিতাস নদীর পাশে সততা, রয়েল মিজান ব্রিকসের কোন অনুমতি নেই, তারা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উপজেলা কৃষি অফিস আল মামুন জানান, সচেতন করার পরও তারা কথা শুনছে না। মাটিকাটা জমিতে উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন বলেন, অবৈধভাবে কোনো ইটভাটা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খালেদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে যা যা করণীয় সবই করছি। দুটি ইটভাটাকে আরও আগেই অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।