চাঁপাইনবাবগঞ্জে উগ্রপন্থা প্রতিরোধে জেলা পর্যায়ে অধিপরামর্শ সভা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে উগ্রপন্থা প্রতিরোধে জেলা পর্যায়ে জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ এর কার্যকর বাস্তবায়নে অধিপরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়
চাঁপাইনবাবগঞ্জে উগ্রপন্থা প্রতিরোধে জেলা পর্যায়ে জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ এর কার্যকর বাস্তবায়নে অধিপরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রিভেন্টিং এক্সট্রিমেজুম থ্রো অ্যাকটিভ কমিউনিটি এনগেজমেন্ট (পিস) কনসোর্টিয়াম কর্মসূচির সক্রিয় জনসম্পৃক্তকরণ প্রকল্পের আওতায় রূপান্তরের সহযোগিতায় প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি এ সভার আয়োজন করে।
সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, উগ্রপন্থা সমাজে একটা দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার ফলে একটা মানুষ সমাজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। যারা বিকৃত চিন্তা-চেতনা নিজের মধ্যে গ্রথিত করতে বাধ্য হয়, তাদের মধ্যে যে মানবিক গুণাবলি, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, সহনশীলতা ধীরে ধীরে দূরীভূত হয়ে যায়। কাজেই এই উগ্রপন্থা প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, যুবসমাজ আমাদের জন্য একটা শক্তি। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগ যুবক। তারা একদিকে যেমন শক্তি সম্ভাবনা। ঠিক তেমনি তারা যদি সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়, তারা যদি নেতিবাচক চিন্তাভাবনার দ্বারা আকৃষ্ট হয়, তাদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম না থাকে তাহলে তাদের দ্বারা এই সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যুবসমাজ অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী। এই যুবসমাজকে সঠিকপথে চালিত করতে হবে।
আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, একজন তরুণকে তার শিশুবয়স থেকেই কীভাবে বেড়ে উঠবে, তার নির্দেশনা দিতে হবে। যুবসমাজের ইতিবাচক গুণাবলিকে নিয়ে তাদেরকে সমাজের ও রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়া আছে, সেটি তাদের মধ্যে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যুবসমাজকে দেশপ্রেমের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সবার আগে প্রয়োজন একজন ভালো মানুষ হওয়া। দেশের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা সমাজের প্রতি দেশের প্রতি ও মানুষের প্রতি একটা শ্রদ্ধাভক্তি নিজের প্রতি ভালোবাসা যদি না থাকে তাহলে এই অফুরন্ত প্রাণশক্তির যুবক উন্নতি করতে পারবে না। নিজের প্রতি ভালোবাসা যার থাকবে সে দেশের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে পারবে এবং এই উগ্রপন্থা যুবদের মধ্যে আচ্ছন্ন হবে না। আমাদের এই যুবশক্তি আগামীতে যুবসম্পদে পরিণত করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা আশা করি, যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আমাদের সামনের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা আমরা সবার সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণ করতে পারব।
সভায় সূচনা বক্তব্য দেন- প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের এই পিস প্রকল্পের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হলো এই যুবকেরা। এই যুবদের নিয়ে আমরা পিস ক্লাব গঠন করেছি। এই ক্লাবের মূল জায়গাটা হলো, নিজেকে সহনশীল মাত্রায় রাখা, অন্যের মতামতকে সম্মান করা। তিনি বলেন, আমরা একে অন্যকে সম্মান করে চলছি; কিন্তু কেউ কেউ এই জায়গা থেকে সরে যাচ্ছি। এটাতে আমরা কাজ করছি এক্সট্রিমিজম প্রিভেনশনের জন্য কাজ করছি। এই যে এক্সট্রিমিজম বা উগ্রপন্থা এটা থেকে কিভাবে সমাজকে রক্ষা করতে পারি। সেই জায়গা থেকে আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে তা সম্ভব নয়।
হাসিব হোসেন বলেন, আমরা সরকারের সাথে একসাথে এই উগ্রপন্থা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবাবগঞ্জ সার্কেল) আতোয়ার রহমান, জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মান্নান, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসা. সাহিদা আখতার, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার জুবায়ের জাহাঙ্গীর।
সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের মূল বিষয় উপস্থাপন করেন জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ও পিস প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম। সভা সঞ্চালনা ও পিস কনসোর্টিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন কনসোর্টিয়াম পরিচালক শাহাদাত হোসেন বাচ্চু।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর ড. ইমদাদুল হক মামুন, সিভিল সোসাইটির আব্দুর রহিম, পিস প্রকল্পের সদস্য বিপাশা রবি দাস, মেহেরুন নেসা, কামরুন্নাহার, তানভীর রহমান, আসলাম কবীর।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পরিমল কুমার কুন্ডু, দৈনিক গৌড় বাংলার আইটি অফিসার শাহরিয়ার শিমুল, রিপোর্টিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অ্যাসোসিয়েট মৌটুসী চৌধুরী, উপজেলা ফিল্ড অফিসার সেলিম রেজাসহ অন্যরা।
উল্লেখ্য, অধিপরামর্শ সভায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও পিস ক্লাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জিসার্ফ গ্লোবাল কমিউনিটি এনগেজমেন্ট রেসিলিন্ট ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় ও রূপান্তরের কারিগরি সহায়তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি।