চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই মাস ধরে অধ্যক্ষ কলেজে অনুপস্থিত

অধ্যক্ষের এত দীর্ঘ দিনের অনুপস্থিতি বর্তমান সরকারের জেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গূলী প্রদর্শনের সামিল এবং কলেজে উপস্থিত না হয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে দায়িত্ব পালন প্রমাণ করে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই মাস ধরে অধ্যক্ষ কলেজে অনুপস্থিত

বদিউজ্জামান রাজাবাবু স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের পাদপিঠে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক.বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের আন্দোলন এর ভয়ে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে অদ্যবধি কলেজে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি কলেজ প্রাঙ্গণে লাইভ এর মাধ্যমে জানানো হয়েছে। 

এই লাইভে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক আড়াই মাসের অধিক সময় থেকে কলেজে অনুপস্থিত থাকায় অফিস-আদালতের চিঠিপত্র, ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যয়নসহ বিভিন্ন কাগজ-পত্র, শিক্ষকদের বিভিন্ন কাগজ-পত্র স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি হওয়ায় এবং এ বিষয়ে কাউকে লিখিত দায়িত্ব না দেয়ায় কলেজের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে একটি বিশেষ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে যোগ-সাজস করে অধ্যক্ষ আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই সেই একইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ধারাবাহিককতায় গোপনে কিছু কাগজ-পত্রে স্বাক্ষর করছেন, যা প্রতিষ্ঠান ও চাকরীবিধির পরিপন্থি কাজ। এতে করে নাম মাত্র কয়েকজন সুবিধাবাদী সুযোগ নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে কাগজপত্র আদান-প্রদান করে কলেজের মধ্যে বিশৃংখলার সৃষ্টি করে চলেছেন। অধ্যক্ষের এত দীর্ঘ দিনের অনুপস্থিতি বর্তমান সরকারের জেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গূলী প্রদর্শনের সামিল এবং কলেজে উপস্থিত না হয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে দায়িত্ব পালন প্রমাণ করে যে, তিনি বরাবরই একজন স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ কারণে কলেজে যে কোন সময় ঘটতে পারে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা, যার দায় অধ্যক্ষ ও জেলা প্রশাসনকেও বহন করতে হতে পারে। 

এ অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতি এবং কলেজের সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনীর অধিনায়ককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। সরাসরি তাদের বিশেষ সহযোগিতা পাওয়ার আশাবাদী এই কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। 

ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অপসারণের জন্য বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃংখলা সৃষ্টির প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দীন আহম্মদ দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে একটি নির্দেশনা জারি করাকে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ সাথে তারা বলেছেন, আওয়ামীলীগের আমলে অবৈধভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত হয়েছেন, যা চরম অমানবিক আর দৃশ্যমান বে-আইনী। আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারকে ব্যবহার করে কিছু চাটুকার ও দুনীতি পরায়ণ শিক্ষক রাজনীতির অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদ দখল করে সহকর্মী শিক্ষকদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছিলেন বলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। তবে তাদের বিশ্বাস এর কথা জানান যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। কারণ সে সব প্রতিষ্ঠানে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, সাহসী ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান রয়েছেন। লাইভে জানা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির অপকর্মের চিত্র শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্রকে হার মানাবে। তার অপরাধের বিষয়গুলো আওয়ামী সরকারের আমল থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যেমন ঃ দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক সমকাল, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক যায়যায় দিন. দৈনিক আমাদের বার্তা, দৈনিক চাঁপাই চিত্র, দৈনিক শিক্ষাডটতম, দৈনিক চাঁপাই দর্পণ, দৈনিক চাঁপাই কণ্ঠ, দৈনিক প্রকাশ, দৈনিক আজকের শিরোনাম. দৈনিক বিডিসি ক্রাইম বার্তা, দৈনিক অগ্নিশিখা, দৈনিক নিরপেক্ষ, দৈনিক স্বাধীন দেশ, দি ডেইলি স্টেটসহ আরো কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। 

লাইভ পরিচালনাকারী প্রভাষক মোহাঃ জোনাব আলী তাদের কয়েকজন সহকর্মীর উপর অধ্যক্ষের ইভটিজিং, বেতন বন্ধ, শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষককে মারধর, মহিলা শিক্ষকদের অতিরিক্ত সময় কলেজে বসিয়ে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং বিভিন্ন দপ্তরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগের ফলাফল বর্ণনা করেন। 

এই লাইভে বলা হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ এর আন্দোলন এবং শিক্ষকদের আবেদন এর প্রেক্ষিতে সেই সময়ের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন গত ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি ফরোয়ার্ডিং পাঠিয়েছেন অধক্ষের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। সে ফরোয়ার্ডিং বিষয়ে খুব দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তাদের বিশ্বাস। 

এদিকে অধ্যক্ষ কলেজে অনুপস্থিত থাকায় কলেজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কিছু শর্তের কথা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রায় আড়াই মাসের অধিক অনুপস্থিতিকাল সময়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে অফিসের বাইরে গোপনে করা তার সকল স্বাক্ষর বাতিল করা হোক এবং এ স্বাক্ষর প্রক্রিয়াকে অবৈধ, বে-আইনী, অপরাধমূলক, রাষ্ট্র পরিপন্থি আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। 

এই কলেজ এখন অভিভাবকহীন হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে একজন বিসিএস ক্যাডার অধ্যক্ষ পদায়ন করা হোক বা একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা হোক।

তার অপরাধের অনেক প্রমাণ সংরক্ষণে আছে এবং জেলা প্রশাসক, মাউশির মহাপরিচালক, তদন্ত টিম এর কাছে জমা আছে, যার আলোকে তাকে প্রয়োজনে যে কোন পন্থায় কলেজে উপস্থিত করা হোক। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তার ঘরের তালা খুলে দিয়ে তাকে তার পদে অধিষ্ঠিত করা হোক আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে অপসারণ বা বরখাস্ত করা হোক।

জরুরী ভিত্তিতে কলেজে একটি অর্থনেতিক অর্ডিট করে আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ করা হোক।

অধ্যক্ষের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে ফল পেতে প্রশাসনিক কাজের কারণে বিলম্ব সৃষ্টিতে কলেজের ক্ষতি হওয়ায়, কলেজের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি কলেজের অভিভাবক, শিক্ষা বিভাগ ও জেলা প্রশাসন এবং জনগণকে অবহিত করা প্রয়োজন ও জরুরী মনে করায় এই লাইভ কর্মসূচী করতে তারা বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ অনুষ্ঠানে প্রভাষক শাহিনা নার্গিস, মোঃ শাহজালাল উদ্দীনসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।