নওগাঁয় ৩৩ বছর পর দখল মুক্ত হচ্ছে জমি-নিঃস্ব আহাদ আলীর মুখে প্রশান্তির হাসি
নওগাঁর মান্দা উপজেলার বীল উথরাইল গ্রামের বাসিন্দা আহাদ আলী প্রামানিক। ৭১ বছর বয়সী আহাদ আলী পেশায় একজন গাছে রস বিক্রেতা।

এবিএস রতন স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ : নওগাঁর মান্দা উপজেলার বীল উথরাইল গ্রামের বাসিন্দা আহাদ আলী প্রামানিক। ৭১ বছর বয়সী আহাদ আলী পেশায় একজন গাছে রস বিক্রেতা। জীবন সংগ্রামে প্রায় ৩৭ বছর যাবত খেজুর এবং তাল গাছের রস বিক্রি করে চলে তার সংসার। এতবছর বয়সেও গাছে উঠে সংগ্রহ করেন রস। এরপর সেই রস ভাড়ে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। যা আয় হয় তাতেই চলে বুরো স্বামী স্ত্রী সংসার।
বয়োবৃদ্ধ আহাদ আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, জমি বলতে শুধুমাত্র বসত বাড়ির কয়েক শতাংশ জমি রয়েছে মাত্র। তাও কিনতে হয়েছে বাবা মৃত হবিবুর রহমানের কাছ থেকে। তবে ১৯৯২ সালে মান্দা উপজেলার বীল উথরাইল মৌজায় উথরাইল বীলে সরকার থেকে বন্দোবস্ত দলিল মূলে ৭২ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন তিনি। এরপর কেটেছে প্রায় ৩৩ বছর। কিন্তু ১ দিনের জন্যও জমি দখলে পাননি আহাদ আলী।
জমি দখল নিতে এই ৩৩ বছর ঘুরেছে ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যানের পিছনে। এতে আশ্বাসের বাণী ছাড়া মিলেনি আর কিছুই। তাইতো জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে ছেড়ে দিয়েছে জমি পাবার আশা। তবে দলিল সযত্নে আগলে রেখেছেন আহাদ আলী।
আহাদ আলী প্রামানিক বলেন, স্থানীয় একজন প্রভাবশালীর দখলে তার সেই ৭২ শতাংশ জমি। অনেক চেষ্টা করেও জমি বুঝে পায়নি সে। গাছের রস বিক্রির টাকায় কষ্টে চলে তার সংসার। তারপরও জমি পাবার আশায় সাধ্যমত করেছেন খরচ, কিন্তু তাতে হয়নি লাভ।
তবে এবার আহাদ আলী সেই ৭২ শতাংশ জমি ফিরে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে মান্দা উপজেলার বেদখল হওয়া খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানা জমি উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। স্পট গনশুনানির মাধ্যমে বেদখল হওয়া জমি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মালিকের কাছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) শাহ আলম মিয়া বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২১শ একর সরকারি খাস জমি বেদখল রয়েছে। সেগুলো উদ্ধারে কাজ শুরু করা হয়েছে। গনশুনানিতে অংশগ্রহণ করে দাবীকৃত জমির পক্ষে বিপক্ষে তথ্যপ্রমান উপস্থাপনের জন্য বলা হয় স্থানীয়দের। কাগজপত্র সঠিক প্রমাণ হলে জমি বুঝি দেওয়া হচ্ছে প্রকৃত মালিকের কাছে। এত বিপুল পরিমাণ জমির বিরোধ অফিসে বসে মিটানো সম্ভব নয়।
আবার এসব কাজে বার বার অফিসে যেতে মানুষজনও হয়রানির শিকার হতে পারে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনের সেবা পৌঁছে দিতে স্পট গনশুনানির এমন উদ্যোগ।