চাঁপাইনবাবগঞ্জে নবাগত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে তার যোগদান উপলক্ষে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে জেলা পুলিশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেছেন, পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের বা গ্রুপের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করবে না। পুলিশ আইনের মধ্যে থেকেই তার দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশ বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন কাজ করছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি কথাগুলো বলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে তার যোগদান উপলক্ষে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে জেলা পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, মাদকের মতন খারাপ জিনিস হয় না, মাদক জাতিকে ধ্বংস করে দেয়, কাজেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে পুলিশ, পুলিশের কোনো সদস্যও যদি জড়িত থাকে এবং তার বিরুদ্ধে যদি তথ্যপ্রমাণ মিলে তাহলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আয়নাঘর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো আয়নাঘর থাকবে না, আইনের আলোকে যতটুকু সময় আটকে রাখার বিধান আছে, ততটুকুই রাখা হবে। এখানে কীভাবে এটা হয়েছে তা আমি দেখছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন- কোনো ঘটনা ঘটলে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া থাকবে অথবা যে থানার অধীন ঘটনা ঘটবে সেই থানার ওসি কিংবা এসআই তথ্য দিবেন। যদি না দেন তাহলে আপনারা আমাকে ফোন করবেন। জরুরি কোনো বিষয় হলে প্রয়োজনে একাধিকবার ফোন করবেন। অথবা মেসেজ দেবেন। তবে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ হচ্ছে, কোনো বক্তব্য নেয়ার পর যদি দেখেন কোনো অসামঞ্জস্য থেকে গেছে তাহলে সেই বক্তব্যটুকু বাদ দেবেন।
পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেছেন, জঙ্গি নাটক তদন্ত করা হবে। তবে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জই নয়, সারাদেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। পুলিশ বিশাল একটা বাহিনী, এটি একটি বড় কাজ।
নবাগত পুলিশ সুপার বলেন- দেখেন ৫ আগস্টের পর মাঠপর্যায়ে পুলিশের যে স্থবিরতা তা আস্তে আস্তে কাঠিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটার জন্য আগের সেটআপকে বদলি করা হচ্ছে এবং নতুন সেটআপ হচ্ছে অর্থাৎ পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের এখান থেকেই প্রায় ৫০-৬০ জন বদলি হয়ে গেছে, সেই জায়গায় নতুন লোক আসবে। আমি বলতে পারি, পুলিশ ইতোমধ্যেই সক্রিয় হয়ে গেছে। তবে আরেকটু সময় লাগবে, আপনারা সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর গুরুত্বারোপ করে পুলিশ সুপার বলেন- আমার প্রতিদিন সকাল হলেই স্থানীয় পত্রপত্রিকা দেখার প্রয়োজন। ঢাকার পত্রিকার খবর পরে দেখলেও চলবে কিন্তু স্থানীয় সংবাদ আগে দেখার দরকার। কারণ, কোনো সংবাদের গুরুত্ব থাকলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি, তা না হলে হয় বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যাবে। তাই স্থানীয় পত্রপত্রিকাকে অধিক গুরুত্ব দিই।
পুলিশ সুপার মতবিনিময়কালে বলেন- আমি জেনে খুবই খুশি হলাম, এখানে কমিউনিটি রেডিও আছে। সুযোগ পেলে রেডিওটি পরিদর্শনের ইচ্ছে ব্যক্ত করেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবুল কালাম সাহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অফস) মো. নুরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবাবগঞ্জ সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাকরিয়া।
সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, সিটি প্রেস ক্লাব-চাঁপাইনবাবগঞ্জ’র সভাপতি কামাল সুকরানা ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ অন্যান্য প্রেস ক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধিগণ।
এছাড়া স্থানীয় পত্রিকা হিসেবে দৈনিক চাঁপাই দৃষ্টির প্রকাশক ও সম্পাদক এমরান ফারুক মাসুম, দৈনিক গৌড় বাংলার প্রকাশক ও সম্পাদক হাসিব হোসেন, দৈনিক চাঁপাই দর্পণের প্রকাশক ও সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু এবং চাঁপাই চিত্রের নির্বাহী সম্পাদক ওয়ালিউজ্জামান রুবেল উপস্থিত ছিলেন।
পরিচয়পর্বের পর সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেলার বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেন পুলিশ সুপার। এসময় তিনি জানান, দেশের পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে আমাদের জেলার সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। এই জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২৫তম বিসিএসের সদস্য পুলিশ সুপার রেজাউল করিম এর আগে সিরাজগঞ্জে পিবিআইয়ে কর্মরত ছিলেন। বরগুনা জেলার পাথরঘটা উপজেলার বাসিন্দা রেজাউল করিম ১৯৯২ সালে কালমেঘা মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৯৪ সালে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ২০০০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। তিনি ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ২ কন্যাসন্তানের জনক।